শরিফ ওসমান হাদি: এক জুলাইযোদ্ধা ও ‘প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের’ গল্প

শরিফ ওসমান হাদি
শরিফ ওসমান হাদি | ছবি: এখন টিভি
0

ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে এক অপ্রতিরোধ্য কণ্ঠস্বর ও চব্বিশের জুলাইয়ের অন্যতম আপসহীন নায়ক ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। একটি গুলির বিপরীতে সপ্তাহব্যাপী লড়াই শেষে রেখে গেলেন সাহস, প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের মতো কিছু শব্দ, যার প্রতিচ্ছবি ছিলেন হাদি নিজেই। প্রার্থনারত কোটি মানুষের বিপরীতে জীবন বিনাশের হুমকিতে থেমে না যাওয়া হাদি ছুটলেন অন্তিম পথে। কেমন ছিল এত অল্প সময়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান পাওয়া ওসমান হাদির পথচলার গল্প?

১৯৯৩ সালে জন্ম নেয়া এক বীরের জীবনের আলো নিভে গেলো ২০২৫ সালে, মাত্র ৩২ বছর বয়সে। বক্তব্য, শ্লোগান, কবিতা, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধে সাহসের যে কণ্ঠ মানুষের মন থেকে আকাশের সীমানা ছাড়িয়েছে, তার এমন নিরব-নিস্তব্ধতা চোখে কি দেখা যায়!

ঝালকাঠি জেলায় জন্ম নেয়া শরিফ ওসমান হাদিকে নতুন করে আবিষ্কার করে ’২৪ এর জুলাই। গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলন, স্লোগান, মিছিল, বিদ্রোহের মিশেলে যেন নির্মিত এক পূর্ণাঙ্গ প্রাণ হাদি। জুলাইয়ের সোয়া এক বছর পেরিয়েও হৃদয়ের উজ্জ্বলতা কমেনি একটুও।

সতীর্থরা ক্ষমতা ও সমঝোতার প্রশ্নে বিপ্লবের রঙ হারালেও অবিকল ছিল হাদি। দ্বিধাহীন চলার গতি তাকে দলছুট করলেও থেমে যাননি একটুও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার অভিজ্ঞতা ও দাবির ভিত্তিতে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ইনকিলাব মঞ্চ নামের নতুন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।

এ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হয়ে হাদি বারবার গর্জে উঠেছেন দুর্নীতি, দুঃশাসন, আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, লড়াই করেছেন ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, জুলাই আহত ও শহিদদের অধিকার রক্ষায় একচুলও আপস করেননি হাদি। বড় তিনটি রাজনৈতিক দলকেই শাসন করেছে সমানতালে। যেন তার চোখেই নতুন বাংলাদেশকে নিরাপদ দেখেছে দেশের মানুষ। তাইতো তাকে হারানোর ভয়ে প্রথম থেকেই কাতর শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

আরও পড়ুন:

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র চরিত্রে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রধান এ নায়ক। মুড়ি-বাতাসা হাতে নিয়ে ছুটে গেছেন মানুষের দরজায়। নির্বাচনি খরচ যোগাতে নিঃসঙ্কোচে হাত পেতেছিলেন মানুষের কাছে, যা তাকে মানুষের হৃদয়ের অন্তরালে গভীরভাবে লেপ্টে দিয়েছে।

বহমান জীবনকে বাড়তি পাওয়া ভেবেই শত হুমকি মাখেননি গায়ে। হাদি বারবার বলেছেন, বুলেট ছাড়া কেউ তাকে থামাতে পারবে না। সত্যিই তাই হয়েছে। একটি গুলি হাদির মস্তিষ্ক ভেদ করে রক্ত ঝরিয়েছে বাংলাদেশের বুকে। তাইতো তীক্ষ্ণ সমালোচকরাও হাদিকে ফেরাতে হাত তুলেছেন।

গুলিবিদ্ধ হাদির সুস্থতায় কেউ নেই পিছিয়ে। ঢাকা মেডিকেল থেকে এভারকেয়ার, এভারকেয়ার থেকে সিঙ্গাপুর, উড়ন্ত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সঙ্গী হয়েছে কোটি মানুষের প্রার্থনা।

বারবার যিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরতে চেয়েছেন বীরের বেশে, কে ফেরাবে তাকে? সৃষ্টিকর্তাতো তার কথাই রেখেছেন।

মাথার খুলি এফোড়-ওফোড় হয়ে যাওয়ার পরও মানুষের সীমাহীন ভালোবাসাই হয়তো হাদিকে কটা দিন আটকে রেখেছিল এ ভুবনে।

এসএইচ