গতকাল (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় ঢল নামে কয়েক হাজার মানুষের। স্লোগানে মুখর আল-আজ্জান মসজিদ প্রাঙ্গণ। বাশারর আল আসাদের পতনের খুশিতে শুক্রবার সিরীয় নাগরিকদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। শামিল হয়েছেন মসজিদের ইমামও।
আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘পৃথিবীর সব অভিধান এনে জড়ো করলেও এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। ১৩ বছর ধরে নির্যাতিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হওয়া কিংবা বাড়ি ফেরার আনন্দের সাথে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।’
স্থানীয় একজন বলেন, ‘সিরীয় নাগরিকদের এ ঐক্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে। মাতৃভূমির প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসা দেশের মাটির মতোই পবিত্র।’
যদিও সিরীয় নাগরিকদের এই উচ্ছ্বাস আতঙ্কে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি। শুক্রবার রাত থেকে রাজধানী দামেস্কসহ লাতাকিয়া ও তার্তুস প্রদেশে সিরিয়ান সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে দফায় দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। লেবাননের স্থানীয় টেলিভিশন আল মায়াদীনের তথ্য বলছে, সিরীয় সেনাবাহিনীর কমান্ড পোস্ট ও মিলিটারি ওয়্যারহাউজ ছিল এ হামলার লক্ষ্যবস্তু।
রুশ গণমাধ্যম আরটি'র তথ্য বলছে, শুক্রবার রাতে ইসরাইল সিরিয়ার পশ্চিমে খামেমিয়াম প্রদেশের যে এলাকায় হামলা চালায় সেখানে রুশ সেনাদের কমান্ড পোস্ট আর তার্তুসে রাশিয়ান মিলিটারি ওয়্যারহাউজ ছিল। ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী এ বিশেষ এই অঞ্চলটিতে ২০১৭ সালে সেনাঘাঁটি নির্মাণ করে মস্কো।
গেল ছয় বছর ধরে সিরীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর যে কার্যক্রম ছিল, বাসার আল আসাদের পতনের পর তা এখন হুমকির মুখে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদন বলছে, শান্তিপূর্ণভাবে সিরিয়া থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের পথ খুঁজছে মস্কো। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মার্ক্সারের স্যাটেলাইট ইমেজও সেই আলামত উপস্থাপন করছে।
শুক্রবার এই স্যাটেলাইট ইমেজের বরাতে রয়টার্স জানায়, তার্তুসের সেনাঘাঁটি ছেড়ে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে লাতাকিয়া বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছেছে রুশ সেনারা। আন্তোনভ এএন-ওয়ানটোয়েন্টিফোর সিরিজের দু'টি কার্গো বিমানে এসব সরঞ্জাম তুলতেও দেখা গেছে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর তার্তুসের নৌবন্দর থেকে নৌযান সরিয়ে নেয় মস্কো।
পাশাপাশি ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল ফোরের প্রতিবেদন বলছে, কোনো একটি সেনাঘাঁটি থেকে দেড়শোরও বেশি সাঁজোয়া যান নিয়ে সিরিয়া সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে পুতিন বাহিনী। ক্রেমলিন বলছে, এই মুহূর্তে সিরিয়ায় সেনা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ।
এদিকে জর্ডান ও তুরস্কের পর আকস্মিক ইরাক সফরে প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বাগদাদে পৌঁছে ব্লিংকেন সাংবাদিকদের জানান, সিরীয় প্রশাসনের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশের সম্পর্ক কেমন হবে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
ওয়াশিংটন প্রত্যাশা করে, আসাদের স্বৈরশাসনের অবসান সিরিয়ার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। সিরিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অসাম্প্রদায়িক সরকার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সিরিয়ায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিরিয়ার সাথে আঞ্চলিক স্বার্থসহ অনেক দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আছে। আসাদের স্বৈর শাসনের অবসান সিরিয়ার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা করি। এর জন্যে যেকোনো মূল্যে সিরিয়ার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা সিরিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অসাম্প্রদায়িক সরকার চাই যা কোনোভাবেই কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে না।’
যদিও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একাধিক গণমাধ্যমের দাবি, সিরিয়ার শাসনব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট তৎপরতা দেখালেও, দেশটিতে ইসরাইল যে আগ্রাসন শুরু করেছে তা নিয়ে একেবারেই নীরব ওয়াশিংটন। এমনি ইসরাইল-সিরিয়া বাফার জোনে নেতানিয়াহু বাহিনীর টহল নিয়ে জাতিসংঘ বারবার সমালোচনা করলেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় হোয়াইট হাউজ।