ট্রাম্পের ফেডারেল সহায়তা বন্ধের আদেশ আদালতে স্থগিত

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ঋণ ও অনুদান স্থগিতের আদেশ আটকে দিয়েছেন মার্কিন এক বিচারক। অনুমোদন হয়ে যাওয়া আর্থিক সহায়তা স্থগিতের আদেশ আইন পরিপন্থি উল্লেখ করে মামলা করতে যাচ্ছে কয়েকটি অঙ্গরাজ্য। যদিও এই তহবিল স্থগিতকরণ সাময়িক বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, শিক্ষা স্বাস্থ্য, আবাসন আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়।

মাথার ওপর ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা চেপে বসবে, এই মানসিকতা নিয়েই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নিতেই সরকারের খরচ কমাতে জারি করছেন একের পর এক আদেশ। সব ধরনের বিদেশি সহায়তা স্থগিতের পর এবার সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ও অনুদানে স্থগিতাদেশ দিয়ে ফেলে দিয়েছেন হইচই।

আদেশে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের ঋণ আর আর্থিক সহায়তা স্থগিত করতে হবে। এছাড়া আপাতত কোন ধরনের সহায়তা প্রস্তাবের অনুমোদনও দেবেনা মার্কিন প্রশাসন। তবে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর নয় সামাজিক নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্যসেবায়। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এই আদেশের প্রভাব পড়বে সরকারি, বেসরকারি সব সংস্থার ওপর, যে সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় অর্থ সহায়তা আর ঋণের ওপর নির্ভরশীল নিজেদের কার্যক্রম চালাতে।

এই আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফেডারেল বিচারক লরেন আলিখান। জানান, এই ধরনের নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত অনেক দাতব্য সংস্থার জন্য হুমকি। লাখ লাখ মার্কিন সুবিধা পাচ্ছে, এমন অনেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তহবিল সংকটে পড়তে পারে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে শুরু করে যোগাযোগ অবকাঠামো পর্যন্ত। যদিও হোয়াইট হাউজ বলছে, এরমধ্যে দিয়ে বন্ধ হবে অনৈতিক নানা খাতে অর্থায়ন। মার্কিন করদাতাদের করের অর্থের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলেও জানানো হয়।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, 'মার্কিনদের বিলিয়ন ডলারের করের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অবৈধ কোনো খাতে ঋণ বা অনুদান দেয়া হবে না, যা দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে দুর্বল করবে। যারা এককভাবে সহায়তা পাচ্ছেন, তারা পাবেন। তাছাড়া এটা সাময়িক। তহবিল নিয়ে তদারকির পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাইডেন প্রশাসনের অর্থ ছাড়ে কোনো লাগাম ছিল না, এখন নিশ্চিত করতে হবে এক ডলারও যেন সততার সঙ্গে ব্যয় হয়।'

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু সংকট মোকাবিলাসহ নানা খাতে চাপ পড়তে পারে উল্লেখ করে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য। এই স্থগিতাদেশ অবৈধ উল্লেখ করে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, সংবিধান পরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত দেশের সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দিলে তা মেনে নেয়া হবে না।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিতিয়া জেমস বলেন, 'ক্ষমতাবলে তিনি সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছেন। সরকারি দপ্তরগুলোর প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন না। অথচ আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার কথা ছিল। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবো। কিন্তু যখন আইন ভঙ্গ হবে, চুপ থাকবো না। বাইডেন প্রশাসনকেও এই কাজ করতে দেইনি। ৮০ শতাংশ মামলায় জিতে গেছি। আবারও একই প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বান্তা বলেন, 'প্রেসিডেন্ট যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন, যেখানে বাচ্চাদের খাওয়ানো, চিকিৎসা দেয়া আর আবাসন গড়া কঠিন হয়ে পড়ে, আমরা বসে থাকবো না। সংবিধানে হাত দিয়ে শপথ নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে তিনি সংবিধান পরিপন্থি কাজ করতে পারেন না। সরকারের কাছে এটুকু তো আমরা চাইতেই পারি যে তিনি অন্তত নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি ধরে রাখুক।'

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা। তাদের মতে, এই ধরনের আদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও আবাসন খাতে সহায়তা এবং দুর্যোগে মোকাবিলায় ত্রাণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসন চাইছেন ধনকুবেরদের ওপর করের বোঝা কমুক।

সিনেটের ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার বলেন, 'দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন যে পরিবারগুলোর অবস্থা ভালো নয়, তাদের কী হবে? এই বিলিয়ন ডলার সহায়তা পায় রাজ্য, শহর, স্কুল, হাসপাতাল, ক্ষুদ্র ব্যবসা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা দুর্গম এলাকার হাসপাতালে সহায়তা যাবে কীভাবে? প্রেসিডেন্টের কোনো অধিকার নেই আইন ভঙ্গ করার। আমরা লড়বো।'

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি দপ্তরে কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পূর্ণকালীন ২০ লাখ ফেডারেল কর্মী স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়বেন, তাদের দেয়া হবে আট মাসের বেতন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের চাকরি বহাল থাকলেও অফিসে আসতে হবে না। এই প্রস্তাব গ্রহণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যদিও, এই প্রস্তাব প্রযোজ্য শুধু দেশের নাগরিকদের জন্য।

এসএস