যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

'প্রতিবেশিদের যৌথ চক্রান্তের ফল আসাদ সরকারের পতন'

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং সিরিয়ার প্রতিবেশিদের যৌথ চক্রান্তের ফল, বাশার আল-আসাদের পতন বলে মন্তব্য করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তেহরানের কাছে এটির প্রমাণ আছে উল্লেখ করে, অঞ্চলটিতে কিছুতেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিত গাড়ার পরিকল্পনা সফল হতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। এখন ইসরাইলি আগ্রাসনে সিরিয়া আরও বেশি অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা ক্ষমতাচ্যুত আসাদের আরেক মিত্র রাশিয়ার।

১৯৭১-২০০০ সাল: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০-২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর: প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সিরিয়ার শাসন সাম্রাজ্যে আল আসাদ পরিবারের আধিপত্য ইতিহাস টানা ৫৩ বছরের।

হাফিজ আল-আসাদ থেকে শুরু করে বাশার আল আসাদ, পিতা-পুত্র দুই শাসকেরই ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান। এই তালিকায় আছে আরেক পরাশক্তি রাশিয়াও। স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট পতনের আন্দোলন থেকে ২০১১ সালে যখন দামেস্কে গৃহযুদ্ধের উৎপত্তি, তখন থেকে বাশার আল আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় মরিয়া ছিল তেহরান ও মস্কো। কিন্তু শেষ ১২ দিনের টানা অভিযানে প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে সফলতা পায় বিদ্রোহীরা।

এ অবস্থায় রাশিয়া-ইরানের শক্তি ও ভূমিকা নিয়ে শুরু হয় নানান জল্পনা-কল্পনা। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ উত্তেজনায় ইসরাইলি অগ্রযাত্রায় ইরান এবং ইউক্রেনে চলমান অভিযানে রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়ার ফলই আসাদ সরকারের পতন এমন মন্তব্যও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার আসাদ পতনের চার দিনের মাথায় এসে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং সিরিয়ার প্রতিবেশিদের যৌথ চক্রান্তের ফলে বাশার আল-আসাদের পতন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এ বিষয়ে তেহরানের কাছে প্রমাণ আছে বলেও দাবি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার।

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, 'এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সিরিয়ায় যা ঘটেছে তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদীদের একটি যৌথ পরিকল্পনা ছিল। সিরিয়ার একটি প্রতিবেশি সরকার এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। আসল চক্রান্তকারী, মাস্টারমাইন্ড এবং কমান্ড সেন্টার আমেরিকা এবং ইহুদিবাদী শাসনের সাথে কাজ করছে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ রাখে না।'

দখলকৃত এলাকাগুলো সিরিয়ান তরুণদের দিয়েই মুক্ত করা হবে বলে সতর্ক করলেন ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতা। এটি নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে সিরিয়ায় ভিত গাড়তে দেয়া হবে না বলেও হুংকার দিলেন খামেনি।

তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলে আমেরিকার পায়ের নিচের মাটি মজবুত হতে দেয়া হবে না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা-শক্তিতে আমেরিকাকে প্রতিরোধ ফ্রন্টের মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হবে।'

সিরিয়ার আসাদ সরকার পতনে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব কতটা দুর্বল হয়েছে এমন প্রশ্নে ক্রেমলিন বলেছে, এই অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বজায় রেখেছে মস্কো এবং তা চালিয়ে যাবে। তবে ইসরাইলের কারণে সিরিয়ায় পরিস্থিতি কিছুতেই স্থিতিশীল হবে না বলে মন্তব্য ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ।

রাশিয়ার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, 'ইসরাইলি বিমান হামলা এবং গোলানের বাফার জোনের আইডিএফ'র অভিযানে ইতিমধ্যেই অস্থিতিশীল সিরিয়ায় পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল। তাই সিরিয়াকে স্থিতিশীল করা সহজ হবে না। তবে আমরা অবশ্যই সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা দেখতে চাই।'

আসাদ সরকার পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও, সিরিয়া থেকে মনোযোগ সরায়নি ইরান ও রাশিয়া। এবার দেশটিতে ইসরাইলের অপরাধমূলক অগ্রযাত্রা বন্ধে সতর্ক অবস্থানে মস্কো-তেহরান। দামেস্কে তেল আবিবের আগ্রাসন মোকাবিলায় সর্বশক্তি প্রয়োগের ঘোষণাও দিয়েছে খামেনি প্রাশাসন।

এসএস