মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করল ইসরায়েল, জাতিসংঘের উদ্বেগ

ইসরাইলের অভ্যন্তরে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ডে জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণায় তেল আবিবের ওপর ক্ষুব্ধ বিশ্ব সম্প্রদায়। জাতিসংঘ বলছে, ইসরাইল অনবরত আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করে গাজা ইস্যুতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া নেতানিয়াহু প্রশাসন যুদ্ধবিরতির সব প্রস্তাবকে উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, আরব দেশগুলোর সঙ্গে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে, তবে তা ইরান সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। এদিকে, গাজায় অনবরত হামলায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যেই হিজবুল্লাহ'র নেতা নাঈম কাশেমকে গোষ্ঠীটির নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

হঠাৎ করেই ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ৮ দশকের পুরানো শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএকে নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল। সোমবার দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে দুটি বিল পাশ হয়। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইল বা এর অধিকৃত পশ্চিমতীরে কোনো ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না জাতিসংঘের এ ত্রাণ কার্যক্রম সংস্থাটি। কার্যক্রম সীমিত করতে হবে গাজা উপত্যকায়ও। ৯০ দিনের মধ্যেই ইউএনআরডব্লিউএকে সব কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে হবে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যে করিডোরগুলো দিয়ে সংস্থাটি কার্যক্রম পরিচালনা করতো, সবই এখন ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দখলে। নেসেটে বিল পাশের মধ্য দিয়ে এখন আর ইসরাইলে বৈধভাবে কার্যক্রম চালাতে পারবে না সংস্থাটি।

পূর্ব জেরুজালেমে তাদের প্রধান কার্যালয়ও বন্ধ করে দেওয়া হবে। অথচ এই সংস্থাটি গাজায় ১৯৪৯ সাল থেকে কাজ করতো। উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ইসরাইল এটিই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, গাজা যেন আর ফিলিস্তিনিদের জন্য বসবাসের উপযোগী না থাকে।

গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের কারণে দেখা দিয়েছে খাবার, পানি আর ওষুধের তীব্র সংকট। এর মধ্যে তেল আবিবের এই ঘোষণায় ভয়াবহ উদ্বেগ জানিয়েছে মুসলিম ও বিশ্ব সম্প্রদায়।

তারা বলছেন, জাতিসংঘের ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা গুরুতর অপরাধ। উদ্বেগ জানিয়েছে খোদ জাতিসংঘও। অন্যদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই বিল পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন, কারণ এই সিদ্ধান্তে ঝুঁকিতে পড়বে গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন,‘ইসরাইল সরকারকে স্পষ্টভাবে বলেছি, এই সিদ্ধান্তে আমরা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতো গাজাবাসীর জন্য। সংকটের মাঝামাঝি সময়ে এই সংস্থার বিকল্প খোঁজা সম্ভব না। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, সেটাও কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এই সিদ্ধান্ত থেকে ইসরাইল সরে আসবে, এই আশা করছি।’

এদিকে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে হামাস কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বলে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ধারণা করা হলেও, সম্প্রতি হামাস প্রকাশিত একটি ভিডিও বলছে ভিন্ন কথা। এতে দেখা যায়, শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় ইসরাইলের একটি ট্যাংক গুড়িয়ে দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

অন্যদিকে, সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গেও চলছে আইডিএফের সংঘাত। ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর দাবি, হিজবুল্লাহর শতাধিক রকেট হামলা প্রতিহত করেছে তারা। এদিকে, আরব সাগর আর লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে আবারো হামলা চালিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা।

চারপাশের এমন উত্তেজনার মধ্যেও কোনোভাবেই দমছে না ইসরাইল। সোমবার মিশরের দেয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী জানান, আরব দেশগুলোর সঙ্গে অবশ্যই শান্তিচুক্তি করবে তেল আবিব। কিন্তু তা ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, সেটি হলো আরব দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি ফেরাতে ঐতিহাসিক আব্রাহাম অ্যাকর্ড আমরাই স্বাক্ষর করেছিলাম। এই অ্যাকর্ডে ৪টি শান্তি চুক্তি ছিল। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ছিল। এই দেশগুলো তো দেখছে কিভাবে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীরা আমাদের ওপর হামলে পড়ছে। ইরানের শয়তানের অক্ষকে প্রতিহত না করে কোনো শান্তিচুক্তি নয়।’

এদিকে, এখনও প্রশমিত হয়নি ইরানে ইসরাইলের হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনা। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্র, এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে চড়াও হলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, কোন সামরিক অভিযানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। একইসঙ্গে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে ইরানকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে ইরান জানায়, বিপজ্জনক সংঘাতের বিষয়টি কেবল ইসরাইল আর তার মিত্র দেশগুলোর ওপর নির্ভর করছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্র লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযানে না গেলেও ইসরাইলকে সমর্থন করে। তবে ইরান সরাসরি আগ্রাসন চালালে পরিণতি ভালো হবে না। ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে ইসরাইল। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাতে ইসরাইলকে সহযোগিতা করবো। পাশাপাশি ইসরাইল বা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কোনো ক্ষতি হলে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি বলেন, ‘ইসরাইলই এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গাজা আর লেবাননে গণহত্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি করছে? এখানে যত বোমা পড়ছে সব যুক্তরাষ্ট্রের। আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান কাজ করছে। এই অঞ্চলে শান্তি বিনষ্ট হলে যেকোনো উদ্যোগ নিতে পারে ইরান। আন্তর্জাতিক নীতি মেনেই আমরা পদক্ষেপ নেবো।’

ইরান ইস্যুতে চারপাশ থেকে চাপে পড়ে গেলেও গাজা আর লেবাননে সমানে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকা আর লেবাননে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। লেবাননের বাক্কা ভ্যালিতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একদিনেই প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক বেসামরিক নাগরিকের।

এএম

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর