দুই মাস আগেও রুশ সেনারা যখন খারকিভে প্রবেশ করে, কিয়েভের সতর্ক দৃষ্টি ছিল সীমান্তের দিকে। বিবেচনায় ছিল কোথায় কোথায় ইউক্রেনের দুর্বলতা রয়েছে, যেটাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা নিতে পারে রাশিয়া। অথচ গেলো এক সপ্তাহে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে হাজারো সেনা পাঠিয়েছে ইউক্রেন। দাবি করছে কুরস্কের ৭৪টি এলাকা দখলের। এক সপ্তাহে কুরস্ক সীমান্তে সেনা অভিযান চালিয়ে এক হাজার কিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে কিয়েভ।
এই অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে রাশিয়াকে। ইউক্রেনের হামলা আতঙ্কে পার্শ্ববর্তী বেলগোরোদে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, ইউক্রেনের সেনা অভিযানে ভ্লাদিমির পুতিন উভয় সংকটে পড়েছেন।
জো বাইডেন বলেন, 'গেলো এক সপ্তাহে কয়েকবার ইউক্রেনে কথা হয়েছে। মনে হচ্ছে পুতিন উভয় সংকটে পড়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। আমি এই উদ্যোগে স্বাগত জানাই।'
দিশেহারা হয়ে এই অঞ্চলে ভয়াবহ ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমান হামলা চালাচ্ছে মস্কো। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ছোট্ট এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কোনো উদ্দেশ্য কিয়েভের নেই। তবে, মস্কোর ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করা হবে নাকি সেনা সরিয়ে নেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে এখনও দোটানায় রয়েছে কিয়েভ। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য বলছেন, শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা তাদেরও আছে, এটা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী এরইমধ্যে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'সেনাপ্রধান প্রতিনিয়ত জানাচ্ছেন সম্মুখসারিতে কী হয়েছে। কুরস্কে কী হচ্ছে। আমরা অভিযানের পরিসর আরও বাড়াতে চাচ্ছি। শত শত রুশ সেনা আত্মসমর্পণ করেছে। ইউক্রেনকে এখন একতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ইএক্রনের মানুষ নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে। এটা আরেকবার প্রমাণ হলো। সীমান্তে রুশ সেনাদের যত কোণঠাস করবো আমাদের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা ততো বাড়বে। রাশিয়াকে জবাব দিতে হবে।'
কুরস্ক পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমারা নীরব থাকায় জাতিসংঘে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে তিরস্কার করেছে রাশিয়া। মস্কোর অভিযোগ, ইউক্রেন সাধারণ মানুষের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা উল্টো তখন ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের কড়া সমালোচনা করেছে।
জাতিসংঘে রুশ উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, 'জেলেনস্কি প্রশাসনকে কীভাবে পশ্চিমারা সমর্থন দিচ্ছে তা তো দেখতে পাচ্ছি। বলা হচ্ছে এভাবে ইউক্রেন নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। আমি জানতে চাই, আন্তর্জাতিক সমর্থনে কেন রাশিয়াকে লক্ষ্য করা হচ্ছে? কুরস্কে তো কোনো সেনা কার্যক্রমও চলছে না। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন করেছে।'
যদিও এই ইস্যুতে আগেই সতর্ক অবস্থানে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, কুরস্কে অভিযানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, 'ইউক্রেন নিজেদের প্রতিরক্ষা নিজেরাই করছে। ক্রেমলিন ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল। আমি বলতে চাই, ইউক্রেনের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জানতামও না যে, তারা অভিযানের পরিকল্পনা করছে। তবে, ইইক্রেনকে সমর্থন করি, কারণ তারা নিজেদের রক্ষা করছে।'
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতো পরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনের রুশ ভূখণ্ডে হামলা বেশ প্রশংসনীয়। পশ্চিমাদের দেয়া সমরাস্ত্র বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করতে পেরেছে ইউক্রেনীয় সেনারা, যেটা যুদ্ধ শুরুর পর অনেকদিন প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি।
এরমধ্যেই কুরস্কে সেনা সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনেও রাতভর ড্রোন আর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, এই হামলার কড়া জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে। যদিও ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার কোনো অঞ্চল দখলের পরিকল্পনা তাদের নেই। কিয়েভ শুধু চায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, নিজ ভূখণ্ড আর দেশের মানুষের নিরাপত্তা।