রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানি ও খাদ্যশস্য সরবরাহ ব্যবস্থা মন্থর হয়ে পড়ায় আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ধুকছে বিশ্ব অর্থনীতি। এই সংকটকে আরও বেগবান করছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ও লেবাননে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন। পৃথিবীর দুই প্রান্তের ২ সংঘাতে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও।
ইউক্রেন ও ইসরাইলকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তা দিয়ে পশ্চিমারা এই সংঘাত আরও দীর্ঘ করছে বলে অভিযোগ রাশিয়া, ইরানসহ পশ্চিমা বিরোধী দেশগুলোর জোট ব্রিকসের। তাই বিশ্ব অর্থনীতি থেকে পশ্চিমা আধিপত্য দূর করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ১০ দেশের এই জোট।
এ অবস্থায় রাশিয়ায় চলমান ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এছাড়াও গাজা ও লেবাননে আগ্রাসন থামাতে জোটগতভাবে চাপ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। জোর দেন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধের ওপরও।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, 'আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো সংঘাতই যেন আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে। গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেইসঙ্গে লেবাননেও আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে হবে। এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত স্থায়ী সমাধানের জন্য গুরুত্ব দিয়ে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।'
ব্রিকসের সদস্যদেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্য ও তৈলবীজ উৎপাদনকারী বলে উল্লেখ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাই পশ্চিমা আধিপত্যের বাইরে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজেদের মধ্যে শস্য বিনিময় প্রস্তাবটি এগিয়ে নেয়ার সময় এসেছে বলেও দাবি করেন পুতিন। এছাড়াও, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষে ব্রিকস নেতাদের সমর্থনও কামনা করেন তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বরেন, 'বিশ্বের শস্য ও তৈলবীজের বৃহত্তম উৎপাদকদের মধ্যে ব্রিকস দেশগুলোও রয়েছে৷ তাই ব্রিকসের মধ্যে শস্য বিনিময় চালুর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। যার মাধ্যমে নিজেদের পণ্য এবং কাঁচামাল দিয়েই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।'
অন্যদিকে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় মস্কো ও তেহরান কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, 'বিশ্বব্যাপী পশ্চিমাদের আধিপত্য আমাদের রুখে দিতে হবে। এজন্য অর্থনীতি ও রাজনীতিতে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও একযোগে কাজ করতে হবে।'
ব্রিকস দেশগুলোর অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও নিরাপদ করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য সদস্য দেশের নেতারাও। অসুস্থতার কারণে সশরীরে সম্মেলনে যোগ দিতে না পারা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের লু দা সিলভা অনলাইনে যুক্ত হয়ে একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।