বিদেশে এখন
0

বন্যায় বিপর্যস্ত এশিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ

ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ। এরমধ্যে থাইল্যান্ডে ৪৯ ও বসনিয়ায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বন্যার কবলে ভারতের উত্তর প্রদেশ, মেক্সিকো ও ইতালিও। চলছে উদ্ধার তৎপড়তা। ইতালির এমিলিয়া-রোমাগনা শহর ভূতুরে নগরীতে রূপ নিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। অন্যদিকে হারিকেন হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের লণ্ডভণ্ড শহরগুলোতে শুরু হয়েছে মেরামতের কাজ।

গত আগস্ট থেকে প্রবল বন্যায় ধুকছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। এতে এখন পর্যন্ত বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছে বহু মানুষ। ঝুঁকিতে গৃহপালিত ও বন্য প্রাণি। এরইমধ্যে বন্যায় বিপর্যস্ত পাহাড়ি এলাকা থেকে একশোর বেশি হাতিসহ আরও অনেক ধরনের প্রাণিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমরা প্রাণিগুলোকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে নৌকা খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। তবে ভূমিধসের কারণে আমরা দুই রাত এখানেই কাটিয়েছি। আমরা এখন ঢুকতে পারায় প্রাণিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

ভারতের উত্তর প্রদেশও ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। ঘরের ভেতর পানি ঢোকায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন রাজ্যটির গোরখপুরের বহু বাসিন্দা। রাপ্তি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা রক্ষা বাঁধে ফাঁটল দেখা দেয়ায় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে রাজ্যটির বন্যা পরিস্থিতি। ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত।

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, ‘আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। কারণ আমাদের কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছে। সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। এতে আমরা বন্যার পানিতে আটকা পড়ে গেছি।’

মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মেক্সিকোর উপকূলীয় এলাকা। নগরীতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। মৌসুমী ঝড় ইলেভেন-ই এর প্রভাবে শুক্রবার ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিতে বেহাল দশা বলে নিশ্চিত করেছে মেক্সিকান আবহাওয়া সংস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা বলছেন, ভারি বৃষ্টিতে এতো দ্রুত তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে যে, নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার মতো সময়টুকুও পাননি তারা।

বন্যাকবলিত একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি অনেক কঠিন। আজ সকালে এখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যেতে নৌকার অপেক্ষা করছিলাম। কারণ আমার পরিবারের সবাই না খেয়ে আছে। এখন উপায় না পেয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে বেরিয়েছি।’

স্থানীয় একজন বলেন, ‘দ্রুত বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমরা এখান থেকে যেতে পারিনি। প্রথমবারের বৃষ্টিতেই ঘরের ভেতরে পানি ঢুকেছে। সব কিছু এখন পানির নিচে।’

এদিকে হারিকেন হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের লণ্ডভণ্ড শহরগুলোতে শুরু হয়েছে মেরামতে কাজ। নর্থ ক্যারোলিনার ক্ষতিগ্রস্ত সোয়ানানোয়া নদীর পার মেরামতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন হেলেনের আঘাতে দুই শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে ইতালি। একটানা প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় রাস্তাঘাটও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ভূতুড়ে নগরীতে রূপ নিয়েছে ল্যামোন নদী লাগোয়া এমিলিয়া-রোমাগনা শহর।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘এটি এখন একটি ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে। মানুষ সম্ভবত আর কখনও এখানে বাস করবে না। আগেও অনেক বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এখন আবারও একই ঘটনা ঘটেছে। দুঃস্বপ্নের নগরীতে রূপ নিয়েছে এলাকাটি।’

বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপ রাষ্ট্র বসনিয়াও। প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসে অনেক জায়গার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। বন্যার আগ্রাসী থাবায় এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। ধংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ায় আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে উদ্ধাকর্মীরা।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর