খাদ্যাভ্যাসে ফুলকপি ও ব্রকোলি —উভয়ই সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এই দুটি সবজি একই পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এদের পুষ্টিগুণ এবং শরীরের ওপর এদের প্রভাবে বেশ কিছু সূক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার ভিত্তিতে জেনে নিন আপনার শরীরের জন্য কোনটি বেশি কার্যকর।
একনজরে: ফুলকপি বনাম ব্রকোলি (At a Glance)
বৈশিষ্ট্য ফুলকপি (Cauliflower) ব্রকোলি (Broccoli) মূল পুষ্টি ভিটামিন বি৫, বি৬, ফোলেট ও কোলাইন। ভিটামিন সি, এ, কে এবং ক্যালসিয়াম। সেরা গুণ স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও ভালো ঘুমে সাহায্য করে। হাড় মজবুত করে ও ক্যানসার প্রতিরোধে লড়ে। ডায়েট লো-কার্ব বা কিটো ডায়েটের জন্য সেরা। হাই ফাইবার ও হাই প্রোটিন ডায়েটের জন্য সেরা। হার্ট ও রক্ত রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ও হার্ট ভালো রাখে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও মানসিক অবসাদ কমায়। খাওয়ার নিয়ম সেদ্ধ করে রান্না করা ভালো (ভাজলে গুণ কমে)। সালাদ বা হালকা ভাপে (স্টিম) খাওয়া সেরা।
আরও পড়ুন:
পুষ্টির লড়াই: কে বেশি শক্তিশালী?
ফুলকপিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার (Fiber), অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি৫, বি৬ ও কে। তবে পুষ্টির ঘনত্বের দিক থেকে ব্রকোলি কিছুটা এগিয়ে। ব্রকোলিতে ফুলকপির চেয়ে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি (Vitamin C) এবং ক্যালসিয়াম (Calcium) থাকে।
ব্রকোলির গুণ: ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (USDA)-এর গবেষণা অনুযায়ী, এক কাপ ব্রকোলিতে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় মজবুত করতে এবং মানসিক অবসাদ (Mental Stress) দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি ক্যানসার প্রতিরোধ এবং হার্টের সুরক্ষায় (Heart Health) কার্যকর।
ফুলকপির বিশেষত্ব: চিকিৎসক বিশ্বজিৎ মজুমদারের মতে, ফুলকপিতে থাকা 'কোলাইন' (Choline) উপাদান গভীর ঘুমে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি (Memory Power) বাড়ায়। হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্ত চলাচল সচল রাখতেও ফুলকপি অত্যন্ত উপকারী।
পুষ্টির তুলনামূলক বিচার (Nutrition Comparison)
যদিও দুটি সবজিতেই ক্যালরি খুব কম, তবে পুষ্টির ঘনত্বের বিচারে ব্রকোলি কিছুটা এগিয়ে।
ভিটামিন সি (Vitamin C): ব্রকোলিতে ফুলকপির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity Boost) বাড়াতে সাহায্য করে।
ভিটামিন এ (Vitamin A): ব্রকোলিতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা চোখের জ্যোতি (Eyesight) বাড়ায়। অন্যদিকে ফুলকপিতে ভিটামিন এ এর পরিমাণ অনেক কম।
ভিটামিন কে ও ক্যালসিয়াম (Vitamin K and Calcium): হাড়ের সুরক্ষা ও হাড় ক্ষয় (Osteoporosis) রোধে ব্রকোলির ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে অত্যন্ত কার্যকর।
আরও পড়ুন:
মানসিক স্বাস্থ্য ও ঘুম (Mental Health and Sleep)
চিকিৎসকদের মতে, ফুলকপিতে থাকা 'কোলাইন' (Choline) মস্তিষ্কের বিকাশে এবং স্মৃতিশক্তি (Memory) বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি লিভারে চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং ভালো ঘুমে সাহায্য করে। অন্যদিকে, ব্রকোলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদ (Depression) দূর করতে সহায়তা করে।
হার্ট ও ক্যানসার সুরক্ষা (Heart and Cancer Protection)
ব্রকোলিতে রয়েছে 'সালফোরাফেন' (Sulforaphane) নামক একটি শক্তিশালী উপাদান, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয় এবং রক্তনালীর প্রদাহ কমিয়ে হার্টকে সুরক্ষিত রাখে। অন্যদিকে, ফুলকপিতে আছে 'গ্লুকোসিনোলেটস' (Glucosinolates), যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে বা ডিটক্স (Detoxification) করতে সাহায্য করে।
ডায়েট ও ওজন নিয়ন্ত্রণ (Diet and Weight Loss)
লো-কার্ব ডায়েট: যারা কিটো (Keto Diet) বা লো-কার্ব ডায়েট করছেন, তাদের জন্য ফুলকপি সেরা। এটি ভাত বা আটার বিকল্প হিসেবে 'ফুলকপির রাইস' বানিয়ে খাওয়া যায়।
হাই ফাইবার ডায়েট: কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) দূর করতে ব্রকোলির উচ্চ ফাইবার বেশি কার্যকর।
আরও পড়ুন:
ফুলকপি বা ব্রকোলি রান্নার সঠিক পদ্ধতি
পুষ্টিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, অতিরিক্ত ভাজলে ফুলকপির গুণাগুণ কমে যায়। তাই এটি সেদ্ধ করে রান্না করা ভালো। অন্যদিকে, ব্রকোলি রান্না করলে এর ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই ব্রকোলির সালাদ (Broccoli Salad) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।
আপনার জন্য কোনটি সেরা, ফুলকপি নাকি ব্রকোলি?
যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ও ফাইবারের ঘাটতি থাকে, তবে ব্রকোলি হতে পারে আদর্শ পছন্দ। অন্যদিকে, যারা ওজন কমাতে লো-কার্ব (Low-carb Diet) বা কম ক্যালরির ডায়েট অনুসরণ করছেন, তাদের জন্য ফুলকপি সেরা বিকল্প।
আরও পড়ুন:





