মানুষের মানবশরীরে সবরকম পুষ্টিগুণের প্রয়োজন। শরীরে যেমন ভিটামিনের প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনই প্রয়োজন আছে ক্যালসিয়ামের। যদিও এসব উপাদানগুলো শুধু থাকলেই হবে না, সেগুলো সঠিক মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। নাহলে মানুষের শরীর নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
মানবশরীরে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব
হাড় ও দাঁত: হাড় এবং দাঁত মজবুত ও সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।
পেশী: পেশী সংকোচন এবং হৃৎপিণ্ডের ছন্দের সঠিকতা বজায় রাখে।
স্নায়ু: স্নায়বিক সংকেত পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:
রক্ত জমাট বাঁধা: রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, ব্রোকলি এবং অন্যান্য গাঢ় সবুজ শাকসবজি।
মাছ: ছোট কাঁটাযুক্ত মাছ যেমন সার্ডিন।
বাদাম ও বীজ: কাঠবাদাম, তিল, চিয়া সিড ইত্যাদি।
অন্যান্য: সয়াবিন, কমলার রস এবং ক্যালসিয়াম-ফোর্টিফাইড খাবার।
ক্যালসিয়ামের অভাব
অনেকদিন ধরে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খেলে সেক্ষেত্রে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
শিশুকালে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে বয়সবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়। বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ার কারণে এবং ক্যালসিয়ামহীন খাবার খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব হওয়া অবশ্যম্ভাবী।
একাধিক হরমোনের তারতম্যের কারণেও নারীদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যায়।
ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে পেশি ব্যথা, ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন। হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করার সময় উরু ও বাহুতে ব্যথা ছাড়াও হাত, বাহু, পা ও মুখের চারপাশে অসাড়তাও অনুভব হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে চরম ক্লান্তিভাব আসতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।
ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ ও প্রতিকার
হাইপোক্যালসেমিয়া হল একটি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয়। হাইপোক্যালসেমিয়ার কিছু প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে খিটখিটে ভাব, পেশী কাঁপানো, ঝাঁকুনি, কাঁপুনি, অলসতা এবং খিঁচুনি। শিশু ছাড়াও, যে কোনো বয়সেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।
আরও পড়ুন:
দীর্ঘস্থায়ী ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে রিকেট, অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওপেনিয়া হতে পারে, সেইসঙ্গে বিপাকীয় হারে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক কাজও ব্যাহত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কিছু উপসর্গের মধ্যে বুকে ব্যথা, আঙুল এবং পায়ের আঙ্গুলের অসাড়তা, পেশীর ক্র্যাম্প, ভঙ্গুর নখ, শুষ্ক ত্বক এবং দাঁতের ক্ষয় অন্তর্ভুক্ত।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটানোর উপায়
ক্যালসিয়ামের অভাবের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ করার সবচেয়ে নিরাপদ এবং সহজ উপায় হলো খাদ্যে আরও ক্যালসিয়াম যোগ করা। দুগ্ধজাত পণ্য, যেমন পনির, দুধ এবং দই। গাঢ় সবুজ শাক, যেমন ব্রোকলি এবং কালে। নরম হাড়ের মাছ, যেমন সার্ডিন এবং সালমন।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়, যেমন সয়া’র পানীয়, ফলের রস এবং দুধের বিকল্প।
আরও পড়ুন:
কমলা, কলা, ছাঁটাই, জাম্বুরা, স্ট্রবেরি, পেঁপে, আনারস এবং পেয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের উদাহরণ। এছাড়াও ‘ভিটামিন কে’ সমৃদ্ধ ফল যেমন ডুমুর, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, বরই এবং আঙ্গুর স্বাস্থ্যকর। ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, কলার্ড, কালে, সরিষার শাক এবং অন্যান্য সবুজ শাকগুলি অত্যন্ত শোষণযোগ্য ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পুষ্টিগুণে ভরপুর।
হাইপোক্যালসেমিয়ার ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?
ভিটামিন ডি এর অভাব।
একটি প্যারাথাইরয়েড ডিসঅর্ডার বা প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি সার্জারি।
থাইরয়েড অপসারণ সার্জারি (থাইরয়েডেক্টমি)।
জেনেটিক অবস্থার পারিবারিক ইতিহাস যেমন নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন, জেনেটিক ভিটামিন ডি ডিসঅর্ডার বা ডিজর্জ সিন্ড্রোম।
আরও পড়ুন:
নারীদের ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ
নারীদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, ভঙ্গুর হাড় এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি আনে। যদিও হাড় সম্পর্কিত ক্ষয় ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বুঝতে পারেন না। সাধারণত যেব নারীদের বয়স ৪৫ থেকে ৫০ এর মধ্যে বা ঊর্ধ্বে অথবা যারা মেনোপজের কাছাকাছি, তাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন উৎপন্নের হার কমে যায়। ইস্ট্রোজেন, ক্যালসিয়ামের বিপাক ও শোষণে সাহায্য করে।
নারীদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের অভাবের অন্যতম লক্ষণগুলো হলো— পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, ক্লান্তি, পেশিতে টান বা খিঁচুনি।





