শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের জন্য সেরা মানুকা মধু। এটি খাঁটি ও বেশ স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। তবে সুন্দরবনের চাকভাঙা মধু বা স্থানীয় ফুল যেমন-লিচু, সরিষা, কালোজিরা থেকে উৎপাদিত মধুও পুষ্টিগুণে ভরপুর ও উপকারী। এসব মধু সর্দি-কাশি প্রশমন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। খাঁটি মধু চিনতে হলে জল পরীক্ষা ও আগুন পরীক্ষা করা যায়। এছাড়া কেনার সময় বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে প্রাকৃতিক ও প্রক্রিয়াজাত নয় এমন মধু বেছে নিলে তাতে ভেজাল থাকার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।
কোন মধু বেশি উপকারী?
মানুকা মধু: মধুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হলো নিউজিল্যান্ডের মানুকা মধু। এ মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এটি ক্ষত নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
সুন্দরবনের চাকভাঙা মধু: পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে উৎপাদিত হয় দেশের সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক মধু। এটি সর্দি-কাশি ও রোগ প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে।
স্থানীয় ফুলের মধু: দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ করা হয়ে থাকে। এসব মধু লিচু, সরিষা ও কালোজিরা ফুল থেকে উৎপাদন করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহিত হওয়ায় এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ থাকে। বিশেষ করে কালোজিরা মধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হার্টের উন্নতি ঘটায় এবং ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও সহায়ক। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
মধু বেশ উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু অপকারিতাও আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু ক্ষতিকর হতে পারে এবং যাদের পরাগে অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য এটি সমস্যার কারণ হতে পারে।
খাঁটি মধু চেনার উপায়
জল পরীক্ষা: সবচেয়ে সহজে খাঁটি মধু চেনা যায় জল পরীক্ষা বা ওয়াটার টেস্টের মাধ্যমে। এর জন্য এক গ্লাস পানিতে খানিকটা মধু ফেলতে হবে। খাঁটি মধু সহজে পানিতে মিশে যাবে না এবং দলা পাকিয়ে নিচে জমা হবে। কিন্তু ভেজাল মধু দ্রুত পানিতে মিশে যাবে।
আগুন পরীক্ষা: মধু পরীক্ষা করার প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো আগুন পরীক্ষা বা ফায়ার টেস্ট। এ পরীক্ষার জন্য একটি পরিষ্কার সুতো বা কাপড়ের টুকরো প্রয়োজন হয়। এ সুতো বা কাপড়ের টুকরো মধুতে ভিজিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলে খাঁটি মধুতে আগুন জ্বলবে, মধুতে ভেজাল থাকলে আগুন জ্বলবে না।
গন্ধ ও স্বাদ: খাঁটি মধুতে ফুলের সুগন্ধ বা সুঘ্রান থাকে, যা কৃত্রিম মধুর মতো তীব্র হয় না। সুন্দরবনের মধু পাতলা ও ভিন্ন স্বাদের, কালোজিরা ফুলের মধু গুড়ের মতো স্বাদযুক্ত হতে পারে।
চিনির ভেজাল: সাধারণত মধুতে চিনি মেশালে তা ভেজাল হিসেবে ধরা হয়। মধুতে ভেজাল থাকলে সেটি অপেক্ষাকৃত পাতলা হয়ে থাকে এবং এটি স্বাদেও একটু বেশি মিষ্টি হয়। উষ্ণ বা গরম জলে মেশালে খাঁটি মধু স্বচ্ছ থাকবে, তবে চিনি মেশানো থাকলে সেটি ঘোলাটে হয়ে যাবে।
বিশ্বাসযোগ্য উৎস: নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাকৃতিক মধু কিনলে তাতে ভেজাল থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। এছাড়া মধু প্রক্রিয়াজাত করার আগেই যদি কেনা যায়, তাহলে সেটি খাঁটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সাধারণত কাঁচা মধু প্রক্রিয়াজাত মধুর চেয়ে বেশি উপকারী। কারণ এতে মৌমাছির পরাগরেণু, এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে, যা প্রক্রিয়াজাত করলে তাপ এবং ফিল্টারিংয়ের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। প্রক্রিয়াজাত মধু দেখতে মসৃণ ও পরিষ্কার হলেও এর পুষ্টিগুণ কমে যায়।
বিভিন্ন ধরনের মধু চেনার উপায়
সুন্দরবনের মধু: সুন্দরবনের খাঁটি মধু চেনার জন্য এর ঘনত্ব, রং, গন্ধ এবং স্বাদ পরীক্ষা করা যেতে পারে। খাঁটি মধুর রং অ্যাম্বার বা পীতাভ বাদামী হয়ে থাকে। এটি কখনোই খুব বেশি ঘন হয় না এবং একটি স্বতন্ত্র ফুলের সুবাস থাকে। এছাড়া খাঁটি মধু পানিতে মেশালে সহজে মিশে যায় এবং কম আঠালোভাব থাকে।
সরিষা ফুলের মধু: সরিষা ফুলের মধু চেনার জন্য এর গন্ধ, স্বাদ, রং, ঘনত্ব এবং জমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যেতে পারে। খাঁটি সরিষা ফুলের মধুর নিজস্ব ঝাঁঝালো ঘ্রাণ ও স্বাদ থাকে, যা হালকা হলুদ রঙের এবং ঘন হয়। এটি শীতকালে দ্রুত জমে যায় এবং ছোট ছোট দানায় পরিণত হয়, যা এ মধুর একটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
লিচু ফুলের মধু: লিচু ফুলের মধু চেনার জন্য এর রং, গন্ধ এবং স্বাদের উপর নির্ভর করা হয়। খাঁটি লিচু ফুলের মধু সাধারণত হালকা হলুদ বা হালকা সাদাটে সবুজ রঙের হয় এবং এর মধ্যে লিচুর মিষ্টি ও সুগন্ধি ঘ্রাণ থাকে। এটি পাতলা এবং কিছুটা ফ্যানাযুক্ত হতে পারে এবং শীতকালে জমে গিয়ে ঘি’র মতো রূপ ধারণ করতে পারে।
কালোজিরা ফুলের মধু: এ মধু দেখতে কালচে বা গাঢ় রঙের হয় এবং এর স্বাদ ও গন্ধে একটি স্বতন্ত্র ঝাঁঝালো ও গুড়ের মতো ভাব থাকে। খাঁটি কালোজিরা মধু সাধারণত সহজে গলে যায় না বা ফেনা হয় না।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি মধু
বিশ্বের সবচেয়ে দামি মধু হলো এলভিস মধু (Elvish Honey), যা তুরস্কের আয়েরি পর্বতমালার গভীরে পাওয়া যায়। এ মধু বছরে একবারই সংগ্রহ করা হয় এবং এ কারণে এটি খুব দুর্লভ। এর দুর্লভ্যতার কারণে এর দাম অনেক বেশি।
মধু সংরক্ষণের উপায়
মধু সংরক্ষণের জন্য একটি বায়ুরোধী, শুকনো কাচের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখলে মধুর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। মধু যে পাত্রে রাখা হবে, সেটির মুখ ভালোভাবে বন্ধ রাখা জরুরি। তবে মধু ফ্রিজে সংরক্ষণ না করাই ভালো। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডায় মধুর গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে।





