আদা: মসলা ছাড়াও অতি প্রয়োজনীয় এক ভেষজ ওষুধ

আদা ও আদা বাটা
আদা ও আদা বাটা | ছবি: সংগৃহীত
0

আদা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত এক অতি প্রয়োজনীয় মসলা, যা ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। মসলা হিসেবে খাওয়া ছাড়াও রোগ প্রতিরোধে আদার ক্ষমতা একে আলাদাভাবে চেনায়। সর্দি-কাশি, ‌আরথ্রাইটিস, মাইগ্রেন, ডায়রিয়া, গ্যাস, কনস্টিপেশন, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাই-কোলেস্টোরেলের মতো জটিল রোগ নিরাময়ে বেশ উপকারি এ আদা। আদার বিভিন্ন উপকারিতা-অপকারিতা, আদা খাওয়ার নিয়ম ও এর বিভিন্ন গুণাবলী সম্পর্কে বিবিধ তথ্য আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।

আদার খাওয়ার উপকারিতা

নিয়ম করে পরিমিত আদা খাওয়ার অভ্যাস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে। তাছাড়া আদা ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা লাগা, কাশি এবং হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য আদা বিশেষ উপকারী, কেননা এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আদাকুচি | ছবি: সংগৃহীত

আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বলে ব্যথা নাশক হিসেবেও এর ভূমিকা অতুলনীয় বলা যায়। সেই সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত ওজনের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে এটি, কারণ আদা শরীরের ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়ক।

এছাড়া যারা মাইগ্রেন সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্যও আদা বিশেষ উপকারি। কাঁচা আদা চিবিয়ে খেলে বা আদার রস, লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে মাইগ্রেন ও সাইনাসের ব্যথা দ্রুত কমতে শুরু করে।

আরও পড়ুন:

আদা খাওয়ার নিয়ম

—কাঁচা আদায় সামান্য লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারলে তা বমি ভাব দূর করতে বেশ কাজে দেয়। একইসঙ্গে খাবারে রুচিও বৃদ্ধি করে।

—গরম পানিতে লেবুর রস, মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে তা মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। এভাবে প্রতিদিন অন্তত দু’বার আদার রসের মিশ্রণ খাওয়া উচিৎ। 

চায়ের সঙ্গে আদা | ছবি: সংগৃহীত

—নিয়মিত চায়ের সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি সেরে যায়। এক্ষেত্রে আদা কুচি বা আদার রস চায়ের সঙ্গে মেশানো যেতে পারে।

—বিভিন্ন রান্নায়, আচারের মসলা হিসেবে আদা ব্যবহার করা যায়। এতে রান্নার স্বাদ ও পুষ্টি গুণাগুণ অনেকাংশে বেড়ে যায়।

রান্নায় আদার ব্যবহার | ছবি: সংগৃহীত

কাঁচা হলুদ ও আদা একসঙ্গে খাওয়ার উপকারিতা:

হলুদে থাকা কারকিউমিন ও আদাতে থাকা জিঞ্জারল প্রদাহ কমানোর জন্য সুপরিচিত। একসঙ্গে খেলে এ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহজনিত ও ব্যথা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়া এ দু’টি উপাদানের পুষ্টিগুণ একত্রিতভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিছু গবেষণার তথ্যমতে হলুদ ও আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কাঁচা হলুদ ও আদা | ছবি: সংগৃহীত

ভরা পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা:

—আদা জিঞ্জেরল ও শোগাওলের মতো যৌগ হজমকারী এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এর থার্মোজেনিক বৈশিষ্ট্য হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

আদার চারা | ছবি: সংগৃহীত

—আদা পাকস্থলির অ্যাসিডের উৎপাদন কমিয়ে নিম্ন খাদ্যনালীর স্ফিঙ্কটারের সঠিক কার্যকারিতা বাড়ায়, যা পেটের জ্বালাপোড়া কমিয়ে দেয়। 

—আদা পেটের পেশী শিথিল করে এবং পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ কমিয়ে বমি বমি ভাব উপশম করতে সাহায্য করে। 

—খাবারের পর আদা খেলে তা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে। এতে বদহজমের সম্ভাবনা কমে যায়।

—আদা পেটের গ্যাস ও কোষ্ঠবদ্ধতা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন:

চুলের যত্নে আদা:

চুলে আদার রস ব্যবহার করলে তা চুল পড়া কমিয়ে দেয়। এছাড়া আদার রসের ব্যবহার মাথার খুসকি দূর করে এবং চুলকে মজবুত ও ঘন করে তোলে। এটি চুলের ফলিককে শক্তিশালী করে গোড়া থেকে মজবুত করে, এতে চুল পড়ার পরিমাণ কমে যায়। সেই সঙ্গে আদাতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক গুণ খুশকির সমস্যা সমাধান করে। আদাতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক তেল চুলের জট ছাড়াতে এবং চুলকে নরম রাখতে সহায়তা করে।

চুলের যত্নে আদা | ছবি: সংগৃহীত

আদার অপকারিতা:

—আদার অ্যান্টিপ্লেটলেট বৈশিষ্ট্যের কারণে এর অতিরিক্ত সেবন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

—কিছু কিছু ওষুধের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে আদা।

—অতিরিক্ত পরিমাণে আদা গ্রহণ করলে তা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

— যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে আদা গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ আদা রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে দিতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিপদজনক। 

—অতিরিক্ত আদা খেলে তা চোখ ও ত্বকের সংক্রমণের কারণ হতে পারে। 

—অনিদ্রা সমস্যার ক্ষেত্রে আদার প্রভাব রয়েছে।.

আরও পড়ুন:

এসএইচ