বিভিন্ন কারণে এলার্জি হয়ে থাকে। এর মধ্যে খাবারের এলার্জি, পরাগ ও ধুলোবালির এলার্জি (অ্যাজমা), পোকামাকড়ের কামড়ের এলার্জি, ওষুধের এলার্জি, এবং ত্বকের এলার্জি (যেমন একজিমা) অন্যতম।
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্যামেরা কীভাবে বাইরের ক্ষতিকারক পদার্থের (অ্যালার্জেন) বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ওপর এলার্জি নির্ভর করে।
এলার্জির ধরন
খাবারের এলার্জি: কিছু খাবার (যেমন দুধ, ডিম, বাদাম, মাছ) শরীরে গেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
পরাগ ও ধুলোবালির এলার্জি (অ্যাজমা): পরাগ, ধুলো, পশুর লোম ইত্যাদি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে হাঁচি, চোখ লাল হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
পোকামাকড়ের কামড়ের এলার্জি: কিছু পোকামাকড়ের কামড়ে ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
ওষুধের এলার্জি: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
ত্বকের এলার্জি (যেমন একজিমা): ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি, ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা অনেক সময় কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন থেকে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে চর্মরোগের একটি ধরন স্ক্যাবিসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করে। স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামক এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে হয়ে থাকে।
স্ক্যাবিস কেন হয়
স্ক্যাবিস হয়েছে এমন কারো সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। পরিবার, হোস্টেল, বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন আক্রান্ত হলে দেখা যায় বাকি সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ
স্ক্যাবিস হলে সারা শরীরে চুলকানি হয়। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়। রাতে এ চুলকানি বেশি হয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছোট ছোট র্যাশ বা ফুসকুঁড়ির মতো দেখা দেয়। সেগুলো চুলকানোর ফলে পরজীবীর সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়।
স্ক্যাবিসের চিকিৎসা
স্ক্যাবিসের সংক্রমণ হলে সেটি থেকে পরিত্রাণ পেতে বেশ সময় লাগে। ছোয়াচে হওয়ায় এর সংক্রমণ হার বেশি। তাই পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে বাকিদেরও সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মলম ও ক্রিম: পারমেথ্রিন (Permethrin) জাতীয় মলম বা ক্রিম ব্যবহার করা হয়, যা চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রয়োগ করতে হয়।
পরিবারের সবার চিকিৎসা: স্ক্যাবিস আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একসাথে চিকিৎসা করানো উচিত, কারণ এটি খুব দ্রুত ছড়ায়।
কাপড় ও বিছানার চাদর: আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানার চাদর গরম পানিতে ধুয়ে, সরাসরি সূর্যের আলোতে শুকিয়ে বা রোদে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
এলার্জি হলে কী কী সমস্যা হয়
সাধারণ এলার্জির লক্ষণ: নাক ও চোখের সমস্যা (এলার্জিক রাইনাইটিস), হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকানো বা লাল হওয়া, নাক ও গলায় জ্বালাপোড়া বা চুলকানি, ত্বকের সমস্যা, ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ, অ্যামবাত (আচমকা ওঠা লালচে চুলকানিযুক্ত চাকা চাকা ফোলা), একজিমা, ঠোঁট, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে ব্যথা বা শক্ত হওয়া, শ্বাস ছাড়ার সময় বাঁশির মতো শব্দ হওয়া (বিশেষ করে হাঁপানির ক্ষেত্রে)।
খাদ্যজনিত এলার্জির ক্ষেত্রে: বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা।
গুরুতর এলার্জির লক্ষণ (অ্যানাফিল্যাক্সিস): শরীর ফুলে যাওয়া, গুরুতর শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে কিছু খাবার সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে এলার্জি থেকে সুরক্ষা দেয়। নীচে এমন কিছু খাদ্যের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো নিয়মিত খেলে এলার্জির সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
১. আদা: আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি এলার্জির কারণে সৃষ্ট প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত আদা চা পান শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি এলার্জি থেকে মুক্তি দেয়।
২. হলুদ: হলুদে কারকিউমিন নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। যা এলার্জির লক্ষণ কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় হলুদ ব্যবহার করলে এলার্জির প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৩. মৌরি: মৌরিতে থাকা কিছু উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং এলার্জির কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি দূর করতে কার্যকর। তাই এটি খেলে এলার্জির উপশম হয়।
৪. টকজাতীয় ফল: লেবু, কমলা এবং অন্যান্য টকজাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এলার্জির লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় টক ফল থাকলে এলার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫. মধু: স্থানীয় মধুতে বিভিন্ন ফুলের পরাগ কণা থাকে, যা নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীর এসব উপাদানের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে এলার্জির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. দই ও অন্যান্য প্রোবায়োটিক খাবার: দইয়ে প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
৭. পেঁয়াজ-রসুন: পেঁয়াজ এবং রসুনে থাকা কুয়ারসেটিন নামক একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এলার্জির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৮. কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শ্বাসনালীর পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে, যা শ্বাসকষ্ট বা এলার্জির সময় শ্বাস নিতে সহজ করে।
৯. সবুজ পাতা ও সবজি: সবুজ পাতার শাকে থাকা নানা পুষ্টিগুণ এলার্জির সময় শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে সুরক্ষা দেয় এবং এলার্জির সময় প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে।
১০. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার: চিয়া বীজ, স্যামন মাছ, আখরোট ও অন্যান্য ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার এলার্জির সময় প্রদাহ কমাতে ও শ্বাসযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
নিম পাতা খেলে কি এলার্জি কমে?
নিম পাতার মিশ্রণে সেবনের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে সহজ উপায়ে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য নিম পাতার মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে। মিশ্রণ তৈরির জন্য প্রথমে এক কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর শুকনো নিম পাতা পাটায় পিশে গুড়া করে একটি কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যবহারের পদ্ধতি: এক চা চামচের তিন ভাগের এক ভাগ নিম পাতার গুড়া এবং এক চা চামচ ভুষি এক গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে রাখুন। আধা ঘণ্টা পর চামচ দিয়ে নেড়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে এই মিশ্রণ খেতে পারেন। এ মিশ্রণ একনাগাড়ে এক মাস খাওয়ার পর আপনার এলার্জি অনেকটাই কমে যাবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে এলার্জির চিকিৎসা
খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে
প্রোবায়োটিক: দই বা টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং এলার্জি মোকাবিলায় সাহায্য করে।
হলুদ: হলুদে থাকা কারকুমিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, তাই এটি এলার্জির চিকিৎসায় উপকারী।
আনারস: আনারসে থাকা ব্রোমালিন এলার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
কালোজিরা: এটিও একটি ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত, যা এলার্জিসহ বিভিন্ন চর্মরোগে উপকারী।
ত্বকের এলার্জির জন্য চিকিৎসা
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল ত্বকের ফুসকুড়ি ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
ওটমিল স্নান: ওটমিল দিয়ে গোসল করলে ত্বকের ফুসকুড়ি ও চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কোল্ড কম্প্রেস: ঠাণ্ডা সেঁক দিলে চুলকানি ও ফোলাভাব কমতে পারে।
নারকেল তেল: এটি ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার এবং ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
বেকিং সোডা: ত্বকের এলার্জির জন্য বেকিং সোডা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
অপরিহার্য তেল: চা গাছের তেল (tea tree oil) বা নিমের তেল ব্যবহার করা যায়।
অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা: ধুলো, পরাগ বা নির্দিষ্ট কিছু খাবার (যেমন–ডিম, চিনাবাদাম, সয়া, গম) থেকে এলার্জি হলে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন: ভিটামিন ডি এর অভাব হলে এলার্জির ঝুঁকি বাড়তে পারে, তাই প্রয়োজনে ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন।
কোল্ড এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা
কোল্ড এলার্জি (ঠাণ্ডা এলার্জি) থেকে বাঁচার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা: খুব বেশি ঠান্ডা আবহাওয়া বা হিমায়িত পরিবেশে কম সময় থাকার চেষ্টা করতে হবে। বাইরে বের হলে গরম কাপড়, গ্লোভস, টুপি ব্যবহার করতে হবে।
২. গরম পোশাক পরিধান করা: শরীরকে গরম রাখার জন্য এমন পোশাক ব্যবহার করতে হবে যা তাপ ধরে রাখবে।
৩. হাইড্রেটেড থাকা: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শরীরের আর্দ্রতা কমে গেলে এলার্জির সমস্যা তৈরি হয়।
৪. ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা: আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৫. ত্বকের যত্ন নেয়া: ত্বক শুকিয়ে যাওয়া থেকে রোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৬. ওষুধ গ্রহণ: অ্যান্টি-হিস্টামিন বা এলার্জি প্রতিরোধক ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করুন। সমস্যা গুরুতর হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: সুষম খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। সেই সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুমও জরুরি।
৮. মানসিক চাপ কমানো: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ এলার্জির লক্ষণ বাড়াতে পারে। রিল্যাক্সেশন টেকনিক, যেমন মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম চর্চা করুন।
রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়
করণীয় ও চিকিৎসা
অ্যালার্জেন পরিহার: যে জিনিসগুলো এলার্জির কারণ (যেমন: নির্দিষ্ট খাবার, ধুলো, পরাগ) সেগুলোকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
ওষুধ গ্রহণ
অ্যান্টিহিস্টামিন: এলার্জির লক্ষণ, যেমন চুলকানি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাসিভিওন এলার্জি ১২০ এম জি ট্যাবলেট বা হিস্টাকাইন্ড ১২০ এম জি ট্যাবলেট।
কর্টিকোস্টেরয়েড: গুরুতর এলার্জির জন্য ডাক্তার স্টেরয়েড ব্যবহার করতে পারেন, যা প্রদাহ কমায়।
জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যকর খাবার: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক প্রতিকার: ত্বকের এলার্জির জন্য ওটমিল স্নান, নারকেল তেল বা নিম পাতার ব্যবহার উপকারী হতে পারে।
চর্ম এলার্জি দূর করার উপায়
১. অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: যেসব বস্তু যেমন-ডিটারজেন্ট, সাবান, অলংকার ইত্যাদিতে এলার্জি আছে, সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধুলো মাইট এলার্জির একটি সাধারণ কারণ, তাই ধুলোবালির সংস্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
২. ত্বককে সুরক্ষিত রাখা: ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে বা চুলকানি হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ক্লিনজার বা ডিশ ওয়াশিং লিকুইড ব্যবহার করার সময় গ্লোভস ব্যবহার করা ভালো। হালকা সাবান ব্যবহার করুন এবং ত্বক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।
৩. প্রাকৃতিক প্রতিকার: নিমপাতা বেটে ত্বকে লাগালে ব্রণ, ফোঁড়া, চুলকানি ইত্যাদি উপশম হয়। মূলত নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া নারকেল তেল এটি একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার যা শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী। অ্যালোভেরা জেলও কার্যকর।
৪. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: দই এবং অন্যান্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। হলুদ (কারকুমিনযুক্ত) এবং আনারস (ব্রোমালিনযুক্ত) এলার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এলার্জির সবচেয়ে ভালো ওষুধ
অ্যান্টিহিস্টামিন: হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি এবং ত্বকের ফুসকুড়ির মতো সাধারণ এলার্জির লক্ষণের জন্য এগুলো কার্যকর।
কর্টিকোস্টেরয়েড: একজিমা, ডার্মাটাইটিস এবং সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের প্রদাহ ও লালভাব কমাতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার: হলুদ (কারকিউমিন), আনারস (ব্রোমেলিন) প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
প্রোবায়োটিকস: দইয়ের মতো প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা এলার্জি প্রতিরোধে সহায়ক।
স্কিন এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: যেসব জিনিস থেকে এলার্জি হয়, যেমন নির্দিষ্ট সাবান, ডিটারজেন্ট, কসমেটিকস বা কোনো প্রসাধনী, সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
যেসব খাবার থেকে এলার্জি হয়, যেমন ডিম, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
শীতকালে বা ধুলোবালি বেশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ধুলাবালি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়
অ্যালোভেরা, নিম, তুলসী, ক্যামোমাইল, এবং পার্সিমন পাতার নির্যাস ত্বকের ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে অলিভ অয়েল বা ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
প্রদাহরোধী ফল যেমন কমলালেবু, স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ খান, যা ভিটামিন সি-তে ভরপুর এবং এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনুন।
ঔষধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে
চুলকানি, ফোলাভাব এবং লালচে ভাব কমাতে ডাক্তার ফ্লুওসিনোলোন অ্যাসিটোনাইড বা বিটামেথাসোন-এর মতো কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারেন।
ত্বকের এলার্জির জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য ওষুধ যেমন হিস্টাকাইন্ড, গ্লেনফাইন বা অ্যালারনেক্স-এর মতো অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বেশিদিন সমস্যা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
কোন কোন খাবারে এলার্জি আছে
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: গরুর দুধের প্রোটিন বা ল্যাকটোজের প্রতি সংবেদনশীলতা থেকে এলার্জি হতে পারে।
বাদাম: চিনাবাদাম ও গাছ বাদাম (যেমন কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি) এলার্জির সাধারণ কারণ।
ডিম: ডিমের প্রোটিনের কারণে অনেক সময় এলার্জিক রিঅ্যাকশন হয়।
মাছ ও শেলফিশ: টুনা, ম্যাকেরেল, চিংড়ি বা কাঁকড়ার মতো মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীতে এলার্জি হতে পারে।
শস্য: গম ও চালের মতো শস্য থেকেও এলার্জি হতে পারে।
সয়া: সয়াবিন বা সয়া-জাতীয় পণ্য থেকে এলার্জি হতে পারে।
ফল: কিছু ফল, যেমন কলা, উচ্চ হিস্টামিনযুক্ত হওয়ায় এলার্জির কারণ হতে পারে।
হাঁসের মাংস ও পালক: যাদের হাঁসের মাংসে এলার্জি থাকে, তারা হাঁসের পালক ও বর্জ্যেও আক্রান্ত হতে পারেন।
ডাল: অনেকেরই ডালজাতীয় খাবার যেমন মুসুর ডাল থেকে এলার্জি হতে পারে, যার ফলে ত্বকে র্যাশ বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
ভিটামিন ডি এবং এলার্জির সম্পর্ক
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ: ভিটামিন ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ, যা এলার্জিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এর অভাবে এই ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, ফলে এলার্জির ঝুঁকি বাড়ে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: ভিটামিন ডি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং বাইরের ধুলাবালি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এর অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং চুলকানি হতে পারে, যা এলার্জির লক্ষণ হতে পারে।
অন্যান্য কারণ: কিছু ভিটামিন বা সম্পূরক যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি২, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের প্রতি এলার্জিক প্রতিক্রিয়াও আমবাত বা ত্বকের ফুসকুড়ির কারণ হতে পারে।
করণীয়: ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে। যদি ত্বকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে কোনো ভিটামিন বা সম্পূরক গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।





