গত কয়েকবছরে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে বেড়েছে রেলপথ। রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন জেলা। তবে এবার আন্তঃদেশিয় রেল যোগাযোগেও বাড়ছে পরিধি।
সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যার প্রতিফলন দেখা গেছে। সে সফরে সমঝোতা হয় বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল চলাচলের। যা নিয়ে আলোচনার টেবিলও সরগরম।
যদিও প্রতিবেশি দেশের সাথে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা নতুন নয়। নৌ ও সড়কপথ ছাড়াও পাঁচটি রেলরুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করছে। যার দু'টি পণ্যবাহী। তাহলে এবারের সমঝোতায় এত আলোচনা কেন?
এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে রেলযোগে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি পণ্য পরিবহন করতে পারবে ভারত। বলা হচ্ছে, এই সুবিধায় ভারতের ট্রেন গেদে সীমান্ত দিয়ে দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। তারপর ঈশ্বরদী, আব্দুলপুর, পার্বতীপুর, চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতিক্রম করবে। একই ট্রেন হলদিবাড়ী থেকে যাবে আসামের ডালগাঁও। সুযোগ রয়েছে হাসিমারা হয়ে ভুটান যাওয়ারও।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই মাসেই হবে এপথে পরীক্ষামূলক চলাচল। তারা বলছেন, শুধু ভারত নয় নেপাল ও ভুটানের সাথেও এই রেলপথের মাধ্যমে নতুন বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, 'আগামী মাসেই এই পথের কোনো একটা পরীক্ষামূলক চলবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেই শুধু বাণিজ্য থাকবে না। আমা এটা নেপাল ও ভূটানের সাথেও পারস্পরিক এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও অনেক উন্নতি হবে।'
তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মত, এই চুক্তির ফলে দেশের লাভ কতটুকু হবে সেটি সবার আগে পর্যালোচনা করতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক ও অবকাঠামো খাতে কী প্রভাব পড়বে তা বিবেচনা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক বলেন, 'কতটুকু অবকাঠামো শেয়ার ও অবচয় এবং অপারেশনাল ডিজরাপশনে টেকনিক্যাল রিপোর্ট করে নিলে বিষয়টা স্বচ্ছ হবে। তা না হলে এগুলো টেকসই হয় না। আমার যদি ন্যায্য পাওনাটা আদায় করতে না পারি তাহলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।'
আর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেয়া-নেয়ার যোগ-বিয়োগে উভয় দেশের স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছতা জরুরি। সেই সাথে জনগণের সম্পৃক্ততায় জোর দেয়ার দাবি তাদের।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এম হুমায়ুন কবির বলেন, '৯০ শতাংশ মানুষই বুঝতে পারছে না যে কেন এটাতে রাজি হওয়া হয়েছে। এই জায়গাতে স্বচ্ছতা অনেক বেশি দরকার। এই স্বচ্ছতাই টেকসই হওয়ার সুযোগ তৈরি করে। এর সাথে পারস্পরিক উপাদেয়টা থাকা দরকার, এবং দেয়া-নেয়ার যে স্পিরিট সেটা থাকা প্রয়োজন।'
যদিও এ পথের সময়সূচি, পণ্যের ধরন ও ট্রেনের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ হয়নি।