দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। রপ্তানিতে প্রায় ৮৬ শতাংশ অবদান রাখা এ শিল্প খাতটি অস্থির হয়ে ওঠে নানা সময়ে।
দেশের পট পরিবর্তনের পর গেল এক সেপ্টেম্বর বকেয়া বিল, বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও নানা সুযোগ সুবিধার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আশুলিয়া ও গাজীপুরের পোশাক শ্রমিকরা। এ সময় কারখানার নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ ঘোষণা করা হয় ওই এলাকার সব কারখানা। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পুরোপুরি শান্ত হয়নি এ শিল্প অঞ্চল।
বুধবার সকাল থেকে আশুলিয়া এলাকার কারখানাগুলোয় উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও ফের অস্থির হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সেখানকার ৪০৭টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৪৫টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারখানা ছুটি ঘোষণা না করায় আগুন দেয়া হয় কাশিমপুরের বিগ বস নামে একটি ফ্যাক্টরির গুদামে। এছাড়া সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বেক্সিমকো কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার মন্ত্রণালয়ে কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শ্রম উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে জানান, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, 'অর্থ উপদেষ্টা এখানে বসে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বলেছেন। একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আজকে একটা আনরেস্ট একটা বড় আকার ধারণ করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ঋণ দেয়ার মাধ্যমে যেন শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয় সেটা কালকের মধ্যেই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি।'
শ্রমিকদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা অসন্তোষ ছড়াচ্ছে উল্লেখ করেন তিনি। জানান, ঝুট ব্যবসাও শ্রমিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ। এছাড়া দ্রুততম সময়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু হবে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, 'আমরা যেন কাঠামোগত সংস্কারগুলো করতে পারি এবং দীর্ঘমেয়াদি যে সমস্যাগুলো আছে শ্রম আইন এবং নিম্নতম মজুরি নিয়ে কথা আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের একটা শান্ত পরিবেশ দিতে হবে। যেন আমরা আমাদের রিয়েল সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করতে পারি এবং শ্রমিকদের সমস্যাগুলোতে একটা সমাধানের দিকে যেতে পারি। ঝুট ব্যবসা নিয়ে একটা স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে হবে এটার কোনো বিকল্প নেই। বিগত সময়ে রাজনৈতিক সরকারের একটা সমস্যা হচ্ছে তাদের লোকজনই এই ব্যবসাগুলো করে থাকতো। যে কারণে স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়ার সদিচ্ছা তাদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আমরা মনে করি এটার একটা স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।'
এসময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নানা অস্থিরতায় পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'এই আনরেস্টের কারণে একটা পোর্ষন তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে তাদের সোর্সের অন্যান্য যে দেশগুলো আছে সেগুলোতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্ডার সাময়িক শিফট করেছে।'
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৮৬ শতাংশ।