১৯৮৬ সালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ২৫ একর জায়গায় গড়ে ওঠে বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী। সে সময় মাটি ভরাটের জন্য ১০ একর জমি খনন করায় কমে গেছে পরিধি। বাকি ১৫ একর জায়গা ১৩৩টি প্লট করে স্বল্পমূল্যে ৮১ কারখানাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল ও খাদ্যসহ বিভিন্ন রকম ভারি শিল্পপণ্যের উৎপাদন চলছে।
এই শিল্পনগরী থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮৮.৯২ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১৮.৮৫ কোটি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫২.৭৩ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে যা রপ্তানিও হচ্ছে। দেশের মেগাপ্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আন্ধারমানিক নদীতে ৬৬৭ মিটার সেতুতে ব্যবহৃত ধাতবসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের স্লিপার, নাটসহ বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি হয়েছে এই শিল্পনগরী থেকেই। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক হাজারের বেশি শ্রমিক।
তবে সুযোগ-সুবিধার হাতছানি দেয়া এ শিল্পনগরীতে বিদ্যুৎ-পানি সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে। শুরু থেকে এখানে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের প্রবল আগ্রহ থাকলেও তাতে ভাটা পড়েছে নিরাপত্তাহীনতা, ড্রেনেজ লাইনের অপ্রতুলতা, বিসিক কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন হটকারী সিদ্ধান্তে। এতে দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
এছাড়া বড় কোম্পানির গোডাউন হিসেবে প্লট বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। তারা বলেন, আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ পাই না। গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকতে হয়। কিছুক্ষণ পর পর লোডশেডিং হয়। এতে আমাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটে। এখানে বিদ্যুতের অনেক সংকট। শুধুমাত্র পানি আর বিদ্যুতের জন্য ফ্যাক্টরি ঠিকমতো চালাতে পারছি না।
অবৈধভাবে গোডাউন ভাড়া দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ সব সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে বলে জানান বেগমগঞ্জ বিসিক'র উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুনতাসির মামুন। বলেন, 'এ সমস্যাটা অনেক দিনের, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। অবৈধ ভাড়ার ব্যাপারে আমরা তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। নিয়ম অনুসারে না হলে তাদেরকে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।'
সম্ভাবনাময় এ শিল্প নগরীর প্রাণ ফেরাতে বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ নগরীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম। বলেন, 'আমাদের এখানে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক উদ্যোক্তা এখানে আসতে চায়। কিন্তু পানি ও বিদ্যুতের সমস্যার কারণে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।'
এই শিল্পনগরী আবারও ঘুরে দাঁড়াবে ও প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠবে কাজে, এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।