দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। গেল বছর চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড পরিমাণ ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টিইইউএস কনটেইনার ও ১২ কোটি ৩৯ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে। প্রতিবছরই কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে গড়ে চার থেকে সাত শতাংশ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, টানা সরকারি ছুটি কিংবা কারিগরি জটিলতায় পণ্য ডেলিভারি কম হলে বন্দরে কনটেইনার জট বাড়ে। এতে বেড়ে যায় জাহাজ অবস্থানের সময় ও পণ্য খালাসের খরচ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক সময় অসাধু আমদানিকারকরা মাসের পর মাস পণ্য ফেলে রাখে। এতে জায়গা স্বল্পতায় বন্দরের গতি কমে যায়। সেই সঙ্গে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায় পণ্য খালাস বা ডেলিভারির সময়সীমা নিদিষ্ট করে দিতে চায় সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, 'কোন ধরনের কার্গোর জন্য কত সময় এবং কী ধরনের মাশুল আরোপ করা যায় সে বিষয়গুলোতে মরা কটা ক্যাটাগরি করে করে প্রস্তাবনা দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। এটা হলে বন্দরের ইফিসিয়েন্সি বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের পর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।'
তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, খাদ্য পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল খালাসে বিএসটিআই, কোয়ারেন্টিন ও রেডিয়েশনসহ বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট লাগে। যা যথাসময়ে মিলে না। এছাড়া কাস্টমসের প্রক্রিয়াগত জটিলতাকে দুষছেন তারা।
বিজিএমইএ'র সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'এটা কোনো কারণেই সম্ভব না কারণ পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর শুধু একা না। সেখানে ব্যাংক, কাস্টমস ইনভলব আছে।'
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, 'বিভিন্ন দপ্তর কাগজপত্র দিতে আমাদের লোকগুলো হয়রানি হচ্ছে। সেটা যদি আমাদের বিভিন্ন দপ্তরগুলো কাগজপত্র-ডকুমেন্ট দিতে সহযোগিতা করলে পূর্ণ প্রকারভেদে সময় বেঁধে দিলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত না করে পণ্য খালাসের সময় বেধে দিলে তা কার্যকর হবে না। বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে আলোচনা না করেই এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
বিজিএমইএ'র সাবেক সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'একই ছাদের নিচে একটা পয়েন্টে যদি আমরা সার্টিফিকেশনগুলো পেতাম তাহলে আমরা দ্রুততার সাথে কাজগুলো করতে পারতাম। বন্দর ব্যবহারকারী যারা আছেন সেই স্টেকহোল্ডারদের সাথে বন্দর আলাদাভাবে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে আমার মনে হয় ভালো সিদ্ধান্ত হবে।'
বিদ্যমান আইনে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের প্রথম চারদিন বন্দরে পণ্য রাখতে কোনো ভাড়া দিতে হয় না। দ্রুত পণ্য খালাস কার্যক্রমের জন্য এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।