আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেটর নিয়োগের ঘোষণা

চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগে শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে না। নানা জটিলতায় আবারও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বর্তমান অপারেটরের মেয়াদ বাড়ানোর দিকেই এগুচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যদিও নতুন অপারেটর নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সীমিত সময়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এনসিটিতে অপারেটর নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সময়ে জন্য বিনিয়োগ আগ্রহী নয় কেউ। এ পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি যাই হোক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ অপারেটর নিয়োগের দাবি বন্দর ব্যবহারকারীদের।

চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল নিউমুরিং। আয়েরও বড় উৎস এটি। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকায় দ্রুত আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার উঠানামা করা যায় এখানে। বছরে প্রায় ১৩ লাখ টিইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় এই টার্মিনালে। যা মোট হ্যান্ডলিংয়ের ৪২ শতাংশ।

অথচ এই টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য সবশেষ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ২০০৭ সালে নির্মাণের পর থেকে বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক এনসিটি পরিচালনা করছে। শুরু থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে দরপত্রের শর্তে কারসাজির অভিযোগ ছিল ব্যবহারকারীদের।

মেয়াদ শেষ হলেও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বার বার মেয়াদ বাড়িয়ে পরিচালনা করে আসছে সাইফ পাওয়ারটেক। আগামী ৭ জানুয়ারি শেষ হবে বর্ধিত মেয়াদ।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে, যা এখন অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিতে চাইছে। তবে বিদেশি অপারেটরকে দেয়ার প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ হওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় আপাতত এক বছরের জন্য উন্মুক্ত দরদর পত্রের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, 'এটা আরও প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য, গেজেটে সংস্কার আনার জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আমরা এখান থেকে ফাইনাল করে পাঠিয়েছি। আশা করি আমরা হয়তো এই মাসের মধ্যেই এটা পেয়ে যাবো। তখন সাথে সাথে আমরা ওপেন টেন্ডারে চলে যাবো।'

তবে বিনিয়োগ উঠে না আসায় স্বল্পতম সময়ের জন্য দরপত্রের কেউ আগ্রহী হবে না বলে মনে করেন কনটেইনার ডিপো পরিচালনাকারীরা। যদিও এনসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল পরিচালনায় দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগের দাবি তাদের।

বাংলাদেশ ইংল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, 'যেকোনো টেন্ডারে যদি যোগ্য প্রতিষ্ঠানরা অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে সে টেন্ডারের যে এক্সপেক্টেশন সেটাই কিন্তু সার্ভ হবে না।'

এ অবস্থায় বিদেশি অপারেটরকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য দরপত্র আহ্বান নিয়ে সংকটে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। নিজেরা বন্দর পরিচালনা করলেও মুনাফা নিয়ে সংশয় থাকায় আপাতত টেন্ডার না করে ডিপিএম বা সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণের আভাস মিলেছে।

তবে দেশি বা বিদেশি যাই হোক, দীর্ঘমেয়াদে একটি প্রতিষ্ঠানকে অপারেটর হিসাবে বহাল রাখার বিপক্ষে ব্যবসায়ীরা। কারণ এতে বন্দর ব্যবহার খরচ বেড়ে যায়।

বিজিএমইএ'র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'ওপেন টেন্ডার যদি হয় সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি বর্তমানে আমাদের সাথে যে রেট নেগোসিয়েশন হচ্ছে সেটা অনেক কমে আসবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে।'

যদিও শিপিং এজেন্টদের অভিযোগ, এনসিটি ও বন্দরের বাকি ১২টি বার্থ ১৩ জন অপারেটর দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পরিচালনায় করায় তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন ব্যবহারকারীরা। তাই এনসিটির কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে অপারেটর নিয়োগের দাবি শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, 'একটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে অপারেট করতে দেয়া উচিত। ওই টাইমের ভেতরে যদি তার সার্ভিসটা স্যাটিসফ্যাক্টরি হয়, তার ইনভেস্টমেন্টটা ভালো হয়, ক্যাপাসিটির জায়গাটা যদি সে ইমপ্রুভ করতে পারে সবকিছু মিলিয়ে যদি সে ভালো করে তাহলে তাকে আবার রিনিউ করা যেতে পারে।'

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই টার্মিনালে ৫টি জেটিতে এক সাথে চারটি জাহাজ ভিড়তে পারে। পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে এই টার্মিনাল থেকে বন্দরে আয় বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

এসএস