আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

ডলার সংকটে জ্বালানি সরবরাহ ঠিক রাখার চ্যালেঞ্জ

ডলার সংকটে লোহিত সাগরের রাজনীতি যেন নতুন করে চ্যালেঞ্জের অংক কষছে। জ্বালানি হয়ে পড়ছে শাসনের হাতিয়ার। এদিকে, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতও কমছে। এমন অবস্থায় কেমন হবে নতুন সরকারের জ্বালানি নীতি?

বিশ্বে ৩০% জরুরি পণ্যের যে আদানপ্রদান হয় তার মধ্যে বৈশ্বিক বানিজ্যের ১২ শতাংশ হয় লোহিত সাগরের রুটে। যার মধ্যে রয়েছে তেল, খাদ্য ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস। এই পথে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব রপ্তানির ৭০ শতাংশ ও আমদানিতে ৮-১০ শতাংশ।

তবে ডিসেম্বরে ইয়েমেনের সীমানায় লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে হামলার পর অচলাবস্থা শুরু হয়েছে এই জলপথে। জরুরি পরিবহনে উত্তমাশা অন্তরীপ ব্যবহারের সিদ্ধান্তে ১ মিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ গুণতে হবে আমদানি রপ্তানিকারকদের। বাড়বে বীমা খরচ। এসব অনিশ্চয়তা আবারো হাওয়া দিয়েছে জ্বালানার দরদামে। বছরের প্রথম সপ্তাহ যেতে না যেতেই আমেরিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান সেকস বলছে, অস্থিরতা চলতে থাকলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে হতে পারে দ্বিগুণ। সাগরের রাজনীতি তখন ভাগ বসাবে ভূখন্ড পেরিয়ে মধ্যবিত্তের আয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, 'আমাদের এই সাপ্লাই চেইনটা ডিসরাপটেড হয়ে যাচ্ছে। পোর্টটাকে ডাইভার্সিফাই করতে হবে। লোহিত সাগর দিয়ে না পাঠিয়ে অন্য কোনো পথে পাঠাতে হবে।'

আতিয়ার রহমান আরও বলেন, 'ডাইভারসিফিকেশন অফ দ্য প্রোডাক্টস এবং এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন অব দ্য ডেসটিনেশন, এই দুটোই আমাদের করে যেতে হবে। এগুলো যদিও লং টার্ম বিষয়, কিন্তু আমাদের রিফর্ম এজেন্ডার মধ্যে এই বিষয়গুলো রাখতে হবে। নতুন সরকারের যে অর্থনীতি তার মধ্যে এই চিন্তাগুলোকে রাখতে হবে। এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের না বা এনবিআরেরও না, নতুন সময়ে সবাই মিলে সমন্বিত একটি কৌশল আমাদের নিতে হবে।'

এদিকে জ্বালানি মূল্য আর সংকট চাপ বাড়াচ্ছে ডলারের বাজারে। প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ কমে আসায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজিতে নির্ভরতা বাড়ছে। এলএনজি আমদানিতে কাতার ও ওমানের ওপর নির্ভর বাংলাদেশ। এখান থেকে গত ৫ বছরে ৪৬.১৫ মিলিয়ন ঘনমিটার বা দেড় সিসিএফ এলএনজি আমদানি হয়। তাতে ১০ বিলিয়ন ডলার গুণতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। ৮৫ হাজার ৬শ' ৬৭ কোটি টাকা খরচ হয়। আর গত অর্থবছরের অংক ২৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলার সংকটে শুধু কৃচ্ছতাসাধন নয়, বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন গতিশীল রাখতে জ্বালানির যোগান নিশ্চিত করতে কুটনীতিতে আনতে হবে নতুন প্রতিযোগী।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী বলেন, 'বাংলাদেশের অধিকাংশ মার্চেন্টাইজ কিন্তু যেটা এক্সপোর্ট করি, ইমপোর্ট করি, সেটা লোহিত সাগর দিয়ে আসে। আমাদের কিন্তু বিকল্প খুঁজতে হবে। আমাদের জ্বালানির সূত্র শুধু মধ্যপ্রাচ্যে না রেখে বৈচিত্র আনতে হবে।'

অর্থনীতিতে কৃষির অংশগ্রহণ এখনো শিল্প থেকে বেশি। তাই সামষ্টিক অর্থনীতিতে কৃষকের যৌক্তিক অংশিদারিত্ব কৃষিপণ্যের লাভের অংশ পৌঁছানো ও সোলারের মাধ্যমে জ্বালানি নিশ্চয়তা কৃষিতে ভর্তূকির চাপ থেকে এই সংকটে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে সরকারকে।

কৃষি গবেষক কাশফিয়া আহমেদ বলেন, 'কৃষক যদি তার ন্যায্য মূল্যটা পায়। সে যদি মূল্যটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তখন তার এখানে খরচ করতে কোনো কষ্ট হবে না। কিন্তু আমরা ওই জায়গাটা তো নিশ্চিত করতে পারছি না।'

সোলারের মাধ্যমে সেচে জ্বালানি খরচ বাঁচাতে পারছি উল্লেখ করে কাশফিয়া আহমেদ আরও বলেন, 'বর্জ্য থেকে জৈব সার এবং জ্বালানি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারলে সরকার অনেক বেশি এগিয়ে যাবে।'

২০২৫ সাল নাগাদ, দেশে ৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান নিশ্চিতে পুরোনো কুপ সংস্কারের সাথে সাথে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দেশের জনশক্তি কাজে লাগালে এলএনজি নির্ভরতা কমে আসবে, সাশ্রয় হবে ডলার।

এসএসএস