৪২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ১৫ বছরে পাচার আর আত্মসাতে তলানিতে নামিয়ে আনে বিগত সরকার। ফলে আমদানি ও ঋণের দায়ের চাপে দ্বারস্থ হতে হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে।
নানা শর্ত দিয়ে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয় সংস্থাটি। প্রথম তিন কিস্তিতে দু একটি শর্ত পূরণ না করেই মেলে ২৩১ কোটি ডলার। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে শর্ত পূরণে বেঁকে বসে আইএমএফ। হাসিনা সরকারের পতনের পর রিজার্ভ ও ডলারের বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও বেশকিছু নীতি বাস্তবায়নের শর্ত পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ দুই কিস্তি ছাড়ের আগে যে সফর করেছে সেখানে ডলারের দাম খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া, নীতি সুদ হার কমানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ কমানো এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে জোড় দিয়েছে। সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কমলে নীতি সুদ হার কমানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আর্থিক খাতের সংস্কার ও রাজস্ব খাত নিয়ে সমঝোতায় রয়েছে দুই পক্ষ।
তবে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে ডলারের দাম খোলা বাজারে ছাড়া নিয়ে। এ শর্ত এখনই মানছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার ফলে ঋণের কিস্তি পাওয়া নিয়ে নতুন শঙ্কা রয়েছে।
ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে গেলো বছরের ৮ মে আইএমএফের পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ১০ টাকা দাম বাড়িয়ে প্রতি ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১৭ টাকা। এই মূল্যের ২ শতাংশ বেশি-কমে, কেনা-বেচা হওয়ার কথা ছিল ডলারের। কিন্তু তখন কয়েকদিন প্রতি ডলার ১২০ টাকায় কেনা হলেও এরপরই দাম উঠে যায় ১২৬/১২৭ টাকায়।
পরে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বাজারভিত্তিক করে নতুন পদ্ধতি চালু করছ বাংলাদেশ ব্যাংক। কারসাজি বন্ধে এটি বাজার ভিত্তিকই হবে কিন্তু লাগাম থাকবে তাদের হাতে। তবে পুরোপুরি বাজারে ছাড়তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বিধায় রয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের দাম ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। এতে বড় ধরনের কারসাজি হতে পারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ সহ অন্যান্য লক্ষ্য পূরণ হলেও ডলার আর রাজস্ব আদায়ের শর্ত এখনো বাকি আছে। তবে তা পূরণে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু এতে ঋণ পাওয়াকে অনিশ্চিত বলা যাবে না।
এদিকে নজরদারি ঠিক রেখে ডলারের বাজার ছেড়ে দিতে আইএমএফের সাথে একমত জানিয়েছে অর্থনীতিবিদরা। তবে ঋণ পাওয়া না গেলে বেশকিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা জানায় তারা।
আগামী জুনের মধ্যে জ্বালানি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রয়োজন রয়েছে। তবে আইএমএফের ঋণ এরমধ্যে না পেলেও তা শোধ করতে সমস্যা হবে না বলে আশা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।