সরকারের হত্যা নির্যাতন পেরিয়ে, আগস্টের প্রথমভাগেই যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, তখন গণঅভ্যুত্থানের একদিন আগে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেয়া হয়। তৎকালীন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নির্দেশে মোবাইল অপারেটরগুলো শুধু মোবাইল ডেটা সেবাই বন্ধ রাখে নি, হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রামও। এবং এই আন্দোলন যখন দানা বাঁধে তখন থেকেই প্রযুক্তি এসব সেবা বন্ধ করে দমন নিপীড়নের পথ বেছে নেয় তৎকালীন সরকার। ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই আরেক দফায় আরও পাঁচদিন ধরে চলে ইন্টারনেট শাটডাউন।
এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার এক ধরনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল যে জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এটি আলোচনায় আসে এর সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তারের পর। অভিযোগ ওঠে, প্রযুক্তি তত্ত্বাবধানের নামে সরকারি এই স্থাপনা ব্যবহার করেই গুম, খুন, গণহত্যা সংঘটিত করেছে কিছু কর্মকর্তা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যখন গণহত্যার অপরাধ প্রমাণে নানা ধরনের তদন্ত চলছে, তখন প্রয়োজন পড়েছে টেলিকমিউনিকেশন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর ডাটা পরীক্ষারও। বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের একটি শুনানিতে কল রেকর্ডসহ বিপুল তথ্য ভাণ্ডার এনটিএমসি ও বিটিআরসির ডাটা সংরক্ষণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে, জুলাই আগস্ট মাসের ডেটা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন আদালত।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, 'জুলাই-আগস্টের এই তথ্যগুলোর ব্যাপারে তাদের ইনভেস্টিগেশন করে তারপর অ্যানালাইস করা তাদের নেটওয়ার্ক সিস্টেম ডিভাইস, আইটি লগ, সিস লগ এবং অন্যান্য ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসের ব্যাপারে যেন তদন্ত কাজে সাহায্য করেন সে ব্যাপারে তাদের একটা নির্দেশনা দিয়েছেন।'
এ দিন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে আসেন ছাত্র আন্দোলনে হত্যার শিকার মীর মুগ্ধের দুই ভাই। তারা জানান, তারা সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করেন নি। তবে তারা ব্যক্তি উদ্যোগে এই যে সিসিটিভি ফুটেজ আদালতকে সরবরাহ করেছেন তার ভিত্তিতে, যাবতীয় ফরেনসিক পরীক্ষার ভিত্তিতে পুলিশ, কর্মকর্তা ও সরকারের কারা কীভাবে জড়িত তা বের করবেন।
মীর মুগ্ধের ভাই দীপ্ত বলেন, 'সহযোগিতা বলতে সঠিকভাবে এগোচ্ছে না। সেটা সত্যি কথা, এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান আমরা কোনো কিছু দেখতে পারছি না।'
এর আগে লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেন তার দুই ছেলে।
ডা. ফয়েজ আহমদের ছেলে বলেন, 'আমার পিতার যে হত্যাকাণ্ড, এটা মানবিক মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড। কারণ একজন চিকিৎসক, যার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না, তাকে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রশাসনিক বাহিনী দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভিন্নমতকে দমন করার যে চেষ্টাগুলো হাসিনার সরকার যা করে আসছে তারই একজন ভিক্টিম ছিল আমার পিতা।'
২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় অভিযানের নামে লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. ফয়েজ আহমদের বাসায় ঢুকে র্যাব ১১-এর সিইও তারেক সাঈদের একটি সশস্ত্র দল। অভিযোগে বলা হয়, তার দোতলা বাসভবন থেকে তাকে ছাদে নিয়ে আঘাত করে গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়।