অপরাধ ও আদালত
1

প্রহসনের নির্বাচন: তিন সাবেক সিইসি, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

চট্টগ্রাম

প্রতারণামূলক ও প্রহসনের নির্বাচন করায় সাবেক তিন সিইসি, কমিশন সচিব, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে চট্টগ্রামে। একপেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধানের শপথ ভঙ্গ করার অভিযোগ এনে আদালতে মামলাটি করেন সাবেক এক বিএনপি নেতা। মামলা গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অংশগ্রহণমূলক ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ব্যাপক সমালোচনা হয় দেশে -বিদেশে। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামি সে নির্বাচন বয়কট করে। যে কারণে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। ৯ জানুয়ারি সরকার গঠন হয়। তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমদের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

পরে নুরুল হুদা কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, তবে দলীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত একচেটিয়াভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে। অনেক প্রশ্ন আর অভিযোগের মুখেও টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পায়।

এরপর সবচেয়ে বিতর্কিত আউয়াল কমিশনের অধীনে ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা সরকার। দমন করা হয় বিরোধীমত। যে নির্বাচনকে খোদ বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

মানুষের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় স্বৈরাচারী তকমা পায় হাসিনা সরকার। পতন হয় ১৬ বছরের মসনদের।

একতরফা নির্বাচনের অভিযোগে সাবেক তিন কমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল হকের আদালতে। মামলার বাদি সাবেক বিএনপি নেতা একারমুল করিমসহ আইনজীবীরা।

মামলায় সাবেক তিন সিইসি কাজি রকিবুদ্দিন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও কমিশনাররা এবং সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও জাহাঙ্গির আলমকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় নাম উল্লেখ করা মোট আসামি ১৮ জন। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদি একরামুল করিম বলেন, 'যারা সংবিধান রক্ষা করার কথা, তারা সংবিধান ভঙ্গ করেছে। এটাতে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছে। সেজন্য আমি একজন নাগরিক হিসেবে এই বিষয়টা আদালতে এনেছি।'

এ তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরও এ মামলার আসামি করা হয়েছে। অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করা ও জনগণের টাকা লুটপাট ও বিদেশ পাচার করার অভিযোগ আনা হয় এসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

মামলার আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, 'আদালত আমাদের মামলাটা গ্রহণ করেছেন এবং চট্টগ্রামের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের তদন্ত করার জন্য বিষয়টা প্রেরণ করেছেন।'

এছাড়া এ তিনটি নির্বাচনে অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা ও শাস্তির দাবি করা হয়।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর