গাজায় যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবারের অনেক সদস্য। তাদের তোপের মুখে ইসরাইলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিখ।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোট সরকারের কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ধর্মভিত্তিক দলের এই নেতাও অবশ্য গাজায় অস্ত্রবিরতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার। তার মতে, এ চুক্তি গাজার শাসকদল হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের শামিল। শুধু সরকার বা মন্ত্রিসভাই নয়, কাতারে অনুষ্ঠেয় গাজা অস্ত্রবিরতি চুক্তি নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে ইসরাইলের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। রাজধানী তেলআবিবে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভও করেন তারা।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমি আশা করছি যে অন্তত এবার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে এবং আমরা স্বচক্ষে দেখবো ৯৮ জন মানুষকে দেশে ফিরে আসতে।'
গাজায় আগ্রাসন ১৬তম মাসে গড়ানোর পর অবশেষে সোমবার অস্ত্রবিরতি কার্যকরে চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া ইসরাইল ও হামাসকে হস্তান্তর করে মধ্যস্থতাকারী পক্ষগুলো। কাতারের রাজধানী দোহায় এ আলোচনায় ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প- দু'পক্ষেরই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
চলতি সপ্তাহের শেষে চুক্তি কার্যকর হতে পারে বলে নিউজম্যাক্স নেটওয়ার্ককে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে ট্রাম্প। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগেই গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে বলে আত্মবিশ্বাসী বিদায়ী প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, 'চুক্তি কার্যকরের খুব কাছে রয়েছি আমরা এবং চলতি সপ্তাহেই এটি কার্যকর হতে পারে। কোনো অনুমান বা কাউকে আশ্বস্ত করছি না আমি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি এমনই আশাদায়ক এবং আমরা চুকি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'
ইসরাইল-হামাস অস্ত্রবিরতি চুক্তির ৯০ শতাংশ চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী বিভিন্ন পক্ষ। অস্ত্রবিরতির আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে নিশ্চিত করে যুদ্ধরত ইসরাইল বলছে, 'কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে' অস্ত্রবিরতি কার্যকর হতে পারে। খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধরত দুই পক্ষ চুক্তিবদ্ধ হলে প্রাথমিকভাবে ৪২দিনের অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে হামাস ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় অর্ধেক জিম্মির বিনিময়ে ইসরাইলে আটক আড়াইশ' ফিলিস্তিনিকে উপত্যকায় ফিরিয়ে নিয়েছে হামাস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'এই যুদ্ধ ইসরাইল আর হামাসের। কয়েক মাস আগে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিলাম আমরা, যেটি এখন প্রায় কার্যকরের পথে। অবশেষে ফল পেতে যাচ্ছি। বহু বছর সরকারে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, কখনো হাল ছাড়তে নেই।'
চুক্তি ও পরিকল্পনা ঠিকঠাক এগোলে যুদ্ধে ইতি টানা হতে পারে দ্বিতীয় ধাপে।
২০২২ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে সরকারি হিসাবেই প্রাণ গেছে ৪৭ হাজার মানুষের। প্রকৃত সংখ্যা এর অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।