উর্বরা মাটির সাথে কৃষকের নিবিড় যৌথতা। এ মাটিতেই সবুজের আল্পনা সাজিয়ে তোলেন প্রান্তিক চাষিরা।
তবে মাটিতে জলের টান পড়লে কপালে ভাঁজ পড়ে কৃষকের। ব্যাহত হয় উৎপাদন।
উত্তর জনপদের বেশকিছু অঞ্চলে কৃষকের সেচের দুশ্চিন্তা দূর করেছে সোলার পাম্প। ডিজেল চালিত পাম্প মেশিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে এটি। জীবাশ্ম জ্বালানির রাহুমুক্ত হয়ে নবায়নযোগ্য এই পদ্ধতিতে সেচ খরচ কমেছে অর্ধেক।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তত্ত্বাবধান ও বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অর্থায়নে সেচ সহায়তা পাচ্ছেন রংপুরের প্রান্তিক চাষীরা।
একজন চাষি বলেন, '৩০ শতক জমিতে বোরো ধানের ক্ষেতে পানি দিতে খরচ হতো এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এখন পানি দিবো এক হাজার টাকায়। আমার ৫০০ টাকা কম লাগবে।'
অন্য একজন চাষি বলেন, 'এখন পানিটা পাবো আমরা। ফসলটা ভালো হবে। খরচটাও কম লাগবে। এতে আমার সুবিধা হবে।'
আরেকজন চাষি বলেন, 'অনেক সময় কারেন্ট থাকে আবার থাকে না। সেজন্য অনেক সময়ই দেখা যেত সঠিক সময়ে পানি পাওয়া যেত না। আর এখন সোলারের মাধ্যমে সবসময় পানি পাওয়া যাবে। এখানে তো কোনো সমস্যা নেই।'
সিএসআর প্রকল্পের আওতায় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় বসানো হয়েছে ২৮টি সোলার পাম্প। যার মধ্যে রংপুরে নয়টি, দিনাজপুরে ১১টি, নীলফামারীতে চারটি, কুড়িগ্রামে তিনটি ও লালমনিরহাটে একটি সোলার পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পাম্প তত্ত্বাবধান করেন পাঁচজন করে কৃষক। যারা নিজেদের জমিতে সেচ নেয়ার পাশাপাশি অন্যদের পানি সরবরাহের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ পাচ্ছেন।
ব্র্যাকের প্রজেক্ট পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, 'কোনো ফসল হতো না। জমি আছে কিন্তু আবাদ করতে পারতো না। আবাদ করলেও প্রাকৃতিক বৃষ্টির মাধ্যমে আবাদ করতে পারতো। কিন্তু বাড়তি যে ফসলটা সেটা হতো না। এখন তারা এই সুবিধাটা পাচ্ছে।'
এ ধরনের সেচ প্রকল্পকে কৃষির জন্য আশীর্বাদ বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারিভাবেও সহায়তার তাগিদ তাদের।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'রবি শস্য এখন কিন্তু অনেকটাই সেচ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এবং এই সেচ নির্ভরতা কাটানোর জন্য আমাদের অবশ্যই আমাদের ইন্ডিজেনাস ইরিগেশন এবং এর ইমপ্রুভমেন্ট যেটা বেসরকারি সংস্থাগুলো নিরন্তর করে যাচ্ছে। তার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।'
প্রকল্প পরিচালনাকারীরা বলছেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিয়মিত সহায়তা কার্যক্রম এটি। দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহত, খাদ্য ব্যবস্থাপনা গতিশীল করার পাশাপাশি কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান বিটপী দাস চৌধুরী বলেন, 'এখানে আমরা কার্বন অ্যামিশন কমাচ্ছি, কোনোরকম তেলের পাম্প ব্যবহার হচ্ছে না বলে। আমরাও পরিবেশের দিকে খেয়াল করে অনেক প্রজেক্ট করি। সুতরাং আমরা এটা দেখতেই পারি ভবিষ্যতে আরও কিছু যদি চাহিদা থাকে আমরা হয়তো এটা নিয়ে কাজ করবো।'
উত্তর জনপদে শিল্প কারখানার খুব একটা বিকাশ ঘটেনি এ কথা সত্য। তবে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে কৃষি, কৃষি এবং কৃষি। আর এ কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়তা করছে এখানকার সোলার পাম্পগুলো। যার মাধ্যমে চাষাবাদ করে একইসঙ্গে সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।