বিদ্রোহীরা দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হামা দখলের চেষ্টা যখন শুরু করেছিল, তখন সংঘাতের আশঙ্কায় পুরো শহর ছিল থমথমে। কিন্তু বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখলের পর এভাবেই বিদ্রোহীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন সিরিয়ার পথে পথে।
শহরের রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে, বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে এই বিজয় উদ্যাপন করেন সরকারবিরোধীরা। নিজেদের বিজয় উল্লাস ভিডিও বার্তায় প্রকাশ করেন বিদ্রোহীরা। এই শহর দখলের পর আসাদ বাহিনীর পাশাপাশি রুশ আর ইরানি মিত্ররাও হতবাক হয়ে পড়েছে।
হামার এক বাসিন্দা বলেন, ‘হামা শহর স্বাধীন হয়েছে, বীর যোদ্ধারা হামা স্বাধীন করেছে। আসাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর জন্য ১৩ বছর ধরে বাস্তুচ্যুত আমরা।’
উত্তরাঞ্চলের হামা দখলের পর বিদ্রোহীদের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনে শামিল হন সিরিয়ার সাধারণ মানুষও। এসময় আসাদ বাহিনী থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য সরকার বিরোধীদের ধন্যবাদও জানান সাধারণ মানুষ। শহর দখলে নিয়ে সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনীকে সরিয়ে কারাগার থেকে অনেককেই ছেড়ে দেন বিদ্রোহীরা।
যদিও সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, হামায় যা হয়েছে, সেটা সাময়িক। বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল সংঘাতের পর তিনি জানান, শহরের বাইরে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে, যেন সাধারণ মানুষের কোন ক্ষতি না হয়। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের মধ্যে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের এমন উত্থান সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আল মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি হামায় আজ যেটা হয়েছে, সেটা সাময়িক। আমাদের সেনাবাহিনী হামার আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। পুরো প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। জাতীয় আর সংবিধানের রীতি অনুযায়ী। খাবারের অনেক সংকট। শত শত মানুষ বেকারির সামনে। কেউ পাবে কেউ পাবে না। অনেক কষ্ট।’
বিদ্রোহীরা বলেছেন, আলেপ্পো আর হামা দখলের পর হোমসের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তারা। রাজধানী দামেস্ক থেকে উত্তরে অবস্থিত এই হোমস শহর রাজধানীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। বিদ্রোহীরা হোমসের সাধারণ মানুষকে বিজয়ের জন্য প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান।
এদিকে, সরকারবিরোধী হায়াত তাহরির আল শামের বিদ্রোহীরা দখলে নিলেও আলেপ্পো শহরে সাধারণ মানুষের অবস্থা বেশ করুণ।
পালিয়ে যাওয়া শত শত সিরীয় নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন আলেপ্পোর পাশে তাবকা শহরে। কোনো কোনো পরিবারের ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। আলেপ্পোতে যারা রয়েছেন, তারাও ধুঁকছেন খাবারের সংকটে।
এদিকে, সিরিয়ায় দ্রুত রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করতে দ্রুত মানবিক করিডোর তৈরি করতে সিরীয় সরকার ও বিদ্রোহীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এই রক্তপাত বন্ধেও এগিয়ে আসতে হবে। হায়াত তাহরির আল শাম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিষিদ্ধ সংগঠন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়ে গেছে জীবন নিয়ে। ১৪ বছরের সংঘাত শেষ হওয়া উচিত।’
এর আগে গেল সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পো দখলে নেয় হায়াত তাহরির আল শামের যোদ্ধারা। সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে একের পর এক শহর বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন দামেস্কের সাধারণ মানুষ।