হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিল। তবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সিরিয়ায়।
আট বছর পর সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোয় প্রবেশ করেছে বিদ্রোহীরা। ইতোমধ্যেই দখলে নেয়া হয়েছে শহরটির দুই তৃতীয়াংশ অঞ্চল। বিদ্যুৎগতির এই অভিযান শুরু হয় গেল বুধবার (২৭ নভেম্বর)। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে সামরিক গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম। আলেপ্পো পতন ঠেকাতে বন্ধ করা হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিমানবন্দর।
এদিকে সিরিয়ার সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গেল তিনদিনে রুশ বিমান হামলায় নিহত হয়েছে চার শতাধিক বিদ্রোহী। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য বলছে, শুক্রবারই (৩০ নভেম্বর) আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে ২৩ বার। শিগগিরই বাশার আল আসাদের বাহিনীকে সামরিক সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তুরস্কের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই শুরু করা হয় এই অভিযান।
হায়াত তাহরির আল শামের যোদ্ধা মোহাম্মাদ হুসেইন আল জুবি বলেন, 'তিন দিন আগে এই অভিযান শুরু হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় আলেপ্পোর পশ্চিমাঞ্চল এখন মুজাহিদিনদের দখলে। আসাদের সেনাদের সাঁজোয়া যান আমরা ব্যবহার করছি। যতক্ষণ আমরা এলাকার দখল ধরে রাখবো, ততক্ষণ এখানকার বাসিন্দারা নিরাপদ থাকবেন।'
আট বছর আগে ইরান, রাশিয়া ও শিয়া মিলিশিয়াদের সহায়তায় আলেপ্পো দখল করে সরকারি বাহিনী। মস্কো ও তেহরানের দুর্বলতার সুযোগে দীর্ঘ সময় পর আবারও শহর পুনর্দখলের অভিযান চালানো হয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নানার হাওয়াচ বলেন, 'ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরান দুর্বল হয়ে গেছে। এই ফ্রন্ট থেকে হিজবুল্লাহ তাদের যোদ্ধাদের ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য লেবাননে সরিয়ে নিয়েছে। সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাশিয়া তাদের সেনাদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠিয়েছে। এটিকেই বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে বিদ্রোহীরা।'
সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাশিয়া বলছে, বিদ্রোহীদের এই অভিযান সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। দেশটিতে সাংবিধানিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে দামেস্ক সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে মস্কো।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সিরিয়ায় শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। পরবর্তীতে যা সুপার পাওয়ারদের ছায়া যুদ্ধে পরিণত হয়। বর্তমান সিরিয়া সরকারকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। অন্যদিকে সরকারকে উৎখাতে বিদ্রোহীরা সমর্থন পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের। দশকব্যাপী সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তিন লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক।