পরিবেশ ও জলবায়ু , এশিয়া
বিদেশে এখন
0

বায়ুদূষণ: দিল্লিতে বন্ধ নির্মাণ কাজ, পাকিস্তানে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কোটি শিশু

বায়ুদূষণের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। দূষণের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিলছে না সাফল্য। দূষণের ভয়াবহতায় ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বন্ধ সব ধরনের নির্মাণ কাজ, বাস-ট্রাক চলাচল। পাকিস্তানে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পাঁচ বছরের কমবয়সী এক কোটির বেশি শিশু।

ঘন, বিষাক্ত ধোঁয়াশায় কয়েক হাত দূরে থেকেও দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে যাচ্ছে ভারতের বিশ্বখ্যাত নান্দনিক স্থাপনা তাজমহল।

স্থানীয় একজন বলেন, 'মৌসুমের প্রথম কুয়াশা পড়েছে আজ। ভীষণ ঘন কুয়াশা। সাধারণত এ সময় তাজমহল দেখা গেলেও আজ অস্পষ্ট, কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাজ দেখতে এসেছি। সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও কুয়াশার কারণে দেখতে পারছি না।'

নয়া দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০০ মিটার দূরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না বলে বুধবার (১৩ নভেম্বর) থেকে বাতিল ও বিলম্বিত হয়েছে হাজারও ফ্লাইট। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমে নেমে আসে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাতাসে দূষণের মাত্রা-আর্দ্রতা অতি উচ্চ। বাতাস বইছে কম। কমেছে তাপমাত্রাও। সবমিলিয়ে তীব্র হয়েছে ধোঁয়াশা।

স্থানীয় একজন নাগরিক বলেন, 'দূষণের আগে চোখ চুলকাতো না, ত্বকে ফুসকুড়িও ছিল না। দূষণ শুরুর পর থেকে এসব সমস্যার মুখে পড়ছি।'

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির বায়ু মান সূচক ৪৫০ ছাড়িয়ে যায়। দূষণের ভয়াবহতায় স্কুল শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস এবং শহরের বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রাতেই শহরের সব ধরনের নির্মাণ ও ভবন ভাঙার কাজ, বাস-ট্রাক চলাচল এবং ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কয়েকশ' কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাব রাজ্যেও ঘন কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার বাইরে অমৃতসর শহরে শিখদের পবিত্রতম উপাসনালয় স্বর্ণমন্দির।

সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বৃহস্পতিবার রাতেও লাহোরে বায়ু মান সূচক ছিল এক হাজার ৪০০ এর বেশি। তীব্র দূষণে অসুস্থ হয়ে প্রাদেশিক রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ভরে গেছে রোগীতে। পাঞ্জাবে পাঁচ বছরের কমবয়সী এক কোটির বেশি শিশু গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, সতর্কতা জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের।

পাকিস্তান ইউনিসেফের আব্দুল্লাহ ফাদিল বলেন, 'পাঁচ বছরের কমবয়সী এক কোটি ১০ লাখ শিশু শুধু নয়, অন্তঃসত্ত্বা মা এবং তাদের গর্ভের সন্তানও ভীষণ ঝুঁকিতে আছে। অপরিপক্ব, সবচেয়ে নমনীয় বলে ধোঁয়াশার প্রভাবও তাদের ওপরই সবচেয়ে মারাত্মক।'

দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শহরে নানা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েও বাতাসের মান নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি প্রশাসন। শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ বাড়তে থাকায় প্রায় ২০০ ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক খুলেছে প্রশাসন, হাসপাতালগুলোতেও বাড়ানো হচ্ছে শয্যা।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন ডাক্তার বলেন, 'ধোঁয়াশার কারণে এত মানুষ ফুসফুসের রোগে আর শ্বাসকষ্টে ভুগছে যে আমাদের বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। সবাই ওষুধ নিতে আসছে। অনেকেই মাস্ক পরছে না বলে কাশি, সর্দি, জ্বর এড়াতে পারছে না।'

চলতি মাসে পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বায়ু মান সূচক রেকর্ড করা হয়েছে এক হাজার ৯০০। যেখানে বেঞ্চমার্ক হিসেবে ৩০০ পার করাই মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি বলে মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এসএস