ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য মিত্রতা ছয় দশকের বেশি সময়ের। বিপদে সঙ্গী তো হয়েছেই, ভূমি দখল থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনি গণহত্যা- সব কুকর্মে ইসরাইলকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রশাসন। সেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই নাকি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ইহুদিরা।
ইউনিভার্সিটি অব মায়ামির এক জরিপে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলা এবং অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবিদ্বেষের শিকার ৩৫ লাখ মার্কিন ইহুদি। গত ১২ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৭৫ জন মার্কিন ইহুদির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে বলা হয়, প্রায় চার লাখ ইহুদি শিশুর পাঁচ ভাগের এক ভাগই গেলো এক বছরে কোনো না কোনো দিক থেকে ব্যক্তিগতভাবে ইহুদিবিদ্বেষের শিকার। এছাড়াও নিজ এলাকায় ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক, বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের সাক্ষী, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
অ্যান্টি ডিফেমেশন লিগের আলাদা জরিপে দাবি, ১৯৭৯ সালের পর মার্কিন ভূখণ্ডে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে ইহুদি বিদ্বেষের ঘটনা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের ১০ হাজারের বেশি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে সংস্থাটি, যা আগের বছরের তুলনায় ২০০ শতাংশ বেশি। পরিস্থিতির জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেছেন আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সম্পর্ক টেকসই এবং শক্তিশালী। আমি বলছি, আমি প্রেসিডেন্ট হলে আগের চেয়েও দৃঢ় ও ঘনিষ্ঠ ওয়াশিংটন-তেল আবিব সম্পর্ক। এই নির্বাচনে আমাদের জিততে হবে। যদি জিততে না পারি, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে প্রকাশ হলো এসব জরিপ। যখন বাতাসে জোর গুঞ্জন, ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন চান ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। আর এ কারণেই বাইডেন প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে গাজায় অস্ত্রবিরতি বারবার ঠেকিয়ে দিচ্ছেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
যদিও গাজার হত্যাযজ্ঞে শতকোটি ডলারের সামরিক সহায়তার পাশাপাশি ইসরাইল ও ইহুদিদের প্রতি বারবারই জোর সমর্থন জানাচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস। আবার ভোট ভাগ হয়ে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প লাভবান হবেন বলে মুসলিম ভোটারদের সমর্থনও হারাতে চান না কামালা।
তিনি বলেন, 'বিশ্বকে সুস্থ করে তোলায় প্রতিজ্ঞায় আমরা অবিচল। যেমনটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চেয়ে এসেছেন ইহুদিসহ বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষেরা। সেটাই শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখবো আমরা। গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তিতে ইতি টানতেও কাজ করবো আমরা, যারা গত এক বছর ধরে চরম দুঃখ-দুর্দশার শিকার হয়েছেন।'
'জুইশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল অব আমেরিকার সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি ভোটারদের ৬৮ শতাংশেরই পছন্দের প্রার্থী কামালা। অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রতি বারবার কঠিন সমর্থনের কথা বলা ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা ২৫ শতাংশ ইহুদির।