ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে এক সপ্তাহ আগে ভর্তি হয়েছেন কোণাপাড়া থেকে আসা মনিরুল ইসলাম। হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ডেঙ্গু ডেডিকেটেড তিনটি ওয়ার্ডে চাপ এতো বেশি যে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
মনিরুল ইসলাম বলেন, 'প্রচণ্ড জ্বর, বমি বমি ভাব আসে। আবার শরীর দুর্বল লাগে।'
একজন রোগীর মা বলেন, 'আমার মেয়েকে নিয়ে গতকাল রাতে আসছি, আবার একবার পরীক্ষা করে দেখবো আমার মেয়ের ডেঙ্গু হয়ে কি না।'
ঢাকার যেসব সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়, তার মধ্যে মুগদা হাসপাতাল একটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু রোগীও চিকিৎসা নিতে আসেন এখানেই।
চিন্তা বাড়ছে রোগীর স্বজনদের নিয়ে। ওয়ার্ডের চারপাশেই বড় বড় খোলা জানালা, মশা কমাতে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। অতিরিক্ত গরম এবং রোগী থাকায় মশারি টানানোরও কোনো জো নেই তাদের।
একজন রোগীর স্বজন বলেন, 'পাশের জানালাটা খোলা আছে। কিন্তু ডেঙ্গু মশাটাকে নিধন করার কোনো ব্যবস্থা করছে না।'
হাসপাতালটির বাইরে সবচেয়ে বড় ডেঙ্গু চিকিৎসা সেবা দেয়া হাসপাতালই যেন মশা উৎপাদনের কারখানা। এই হাসপাতালে কাঁচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও প্লাস্টিকের নল, ব্লেড, কাঁচি পড়ে আছে উন্মুক্ত অবস্থায়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অভিযোগ গেলো তিন মাস ধরে পলিথিন ছাড়া ময়লা ফেলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাছের উদ্দিন বলেন, 'ময়লাটা আগে ছিল পলিথিনে। আজ দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ এই ময়লাটা পলি করা নেই। এতে আমাদের নিতেও সমস্যা, ফেলতেও সমস্যা।'
হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিচালকের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা গেলো পরিচালক নিজেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. মো. হাসানাৎ আল মতীন জানান, সরকার পতনের পর নতুন অর্থবছরের জন্য বায়োহাজার্ড পলিথিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটা শুরু হয়নি ফলে ডেঙ্গুর পিক সিজনেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
ডা. মো. হাসানাৎ আল মতীন বলেন, 'অর্থবছর শেষ হয়েছে, আমাদের নতুন কেনাকাটা এখনও হয়নি। আশা করি এই মাসের শেষের দিকে আমাদের কেনাকাটা শেষ হয়ে যাবে। তখন আমরা যে বায়োহাজার্ড ব্যাগ কিনছি সেটার ভেতর ময়লা ফেলতে পারবো।'
এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০২ জনের। যার মধ্যে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের।