বাজেট প্রতিক্রিয়া
বাজেট ২০২৪-২৫

‘মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা; আগামীতে সরকারের দেনা আরও বাড়বে’

দেশে অব্যাহত ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি আগামী ১২ মাসের মধ্যে কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেটিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আগামী অর্থবছরে সরকারের দেনা আরো বাড়ার পাশাপাশি বিদেশি ঋণের পরিমাণও বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়- বলছে সিপিডি।

আজ (শুক্রবার, ৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনার এসব বিষয় তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

প্রতি বছরের মতো বাজেট ঘোষণা পরদিন অর্থাৎ আজ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে নতুন বাজেটের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে সিপিডি।

পর্যালোচনায় ফাহমিদা খাতুন ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। বাজেটে সেটি আগামী ১২ মাসের মধ্যে সেটা কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা বোধগম্য নয়। এই লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিছু নয়।’

তিনি বলেন, 'বাজেটে রাজস্ব আহরণে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, তা পূরণ হবে না। ঘাটতি হবে ২৭.৩ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩.২ বিলিয়ন।'

এই অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার মাত্রা আরও বাড়বে বলেও মনে করছে সিপিডি। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ঋণ কীভাবে নিবে সেটা চিন্তার বিষয় বলে জানান ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন

সিপিডি এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকারে যে দায় দেনা আছে তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আগামী অর্থবছরে তা আরও বেড়ে যাবে। লক্ষ্যমাত্রা যা দেয়া হচ্ছে বাজেটে, তা আশাব্যাঞ্জক বলা হচ্ছে তবে সেটি অবাস্তব। আগের বছরগুলোতেও একইভাবে আশার কথা বলা হয়েছিল, তবে তা পূরণ হয়নি।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, বাজেটে যে অর্থনৈতিক মূল্য সূচকগুলো দেয়া হয়েছে, বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল নেই। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এডিপির শীর্ষ ৫টি খাতের মধ্যে এসেছে, এটি ভালো দিক।

এছাড়া ৩৪৫টি চলমান প্রকল্প রয়েছে, তা দ্রুত শেষ না হলে বরাদ্দ আরও বাড়তে পারে। তাই প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। ২৫৯টি অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে, যা বিদেশি ঋণের অপেক্ষায়।

পর্যালোচনায় গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে, অপ্রদর্শিত কালো টাকা বা সম্পদ আইনি পর্যায়ে লিগ্যাল করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ করের হার ৩০ শতাংশ, যারা সৎপথে ইনকাম করেছে। যারা কর দিচ্ছে না বা দেয়নি তারা দেবে ১৫ শতাংশ। এর ফলে করের হার দেয়া কমবে। এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সঠিক নয়। কর যারা ফাঁকি দিচ্ছে তাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কর দিতে। পাশাপাশি যারা কর দিচ্ছে তাদের তিরস্কার করা হলো।

বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। যে সকল পণ্যের দাম কমানো হলো তা মনিটরিং করতে হবে হয়ত দাম কমার প্রভাব পড়বে না।

ফাহমিদা খাতুন জানান, সংসদ সদস্যদের করমুক্ত গাড়ি আনার কারণে রাজস্ব বোর্ড অনেক কর থেকে বঞ্চিত হয়। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ জনগণের ওপরে। সংসদ সদস্যদের কিছুটা হলেও কর দেয়া উচিত গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে। এমন মাহাত্ম্য তারা দেখাবেন এমনটাই আশা সিপিডির।

আলোচনায় বিভিন্ন খাতের বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করে সিপিডি। এতে বলা হয়, এই সামান্য বরাদ্দ দিয়ে কীভাবে এতো বড় জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দিবে সেটা বোধগম্য নয়। যে সব মন্ত্রণালয় কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত সেই খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান। বিদ্যুৎ জেনারেশনের যে প্রকল্পগুলো রয়েছে সেখানে নতুন অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ নেই বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির আকারে বরাদ্দ কমছে। তবে মোট বাজেটে কিছুটা বাড়ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে মোট বাজেট শিক্ষায় যা বরাদ্দ থাকে, সেখানে আমাদের অবস্থান শেষের দিক থেকে তৃতীয়।’

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর