বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা আগামীকাল (বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর) বেলা ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে হবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব নামাজে জানাজা পড়াবেন। এরপর খালেদা জিয়াকে স্বামী শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার পাশে দাফন করা হবে। জানাজায় শৃঙ্খলা মেনে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জনগণের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে জানাজা পড়বেন। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে শুধু ছবি তোলার জন্য সামনে এগিয়ে যাবেন না এবং কার্যক্রম ব্যহত করবেন না। দেশনেত্রীর প্রতি আপনাদের যে সম্মান যে শ্রদ্ধা, তা অটুট রাখার জন্য শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন এবং সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে নেত্রীর ইন্তেকালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। এ ক্ষতির পূরণ সহজে সম্ভব নয়। আজকে এমন একটা সময়ে তিনি চলে গেলেন, যখন তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। যখন গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য একটা নির্বাচনের দিকে জাতি যাচ্ছে। যখন সমস্ত জাতি তৈরি হয়েছে নির্বাচন করে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করবে, সেই সময় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এ শোক, এ বেদনা আমাদের পক্ষে ধারণ করা খুব কঠিন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে চাই। আমরা দেশনেত্রীর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। সেই পথকে লক্ষ্য করে আমরা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘সাত দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে আমাদের পতাকা উত্তোলন করবো, কালো ব্যাচ ধারণ করবো। প্রত্যেক কার্যালয়ে দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াত হবে। বিদেশি মিশন, দূতাবাস ও অফিসের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সুবিধার্থে গুলশানের চেয়ারপারসন কার্যালয় ও পল্টনে দলীয় প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী তিন দিন পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে। এরপরে অন্য কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হলে তা জানানো হবে।’
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার পর থেকে এ পর্যন্ত সুস্থতা কামনায় দোয়া এবং মৃত্যুর পর মাগফেরাত কামনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু সমগ্র জাতিকে অভিভাবকহীন করেছে এমন নয় বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সমান্তরাল এক নক্ষত্রের বিদায়কে হৃদয়স্থ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। এ বিয়োগ বেদনা নিদারুণ, এ শূন্যতার ভারবহন সাধ্যাতীত। সমগ্র জাতি তার রোগমুক্তির জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে যেমন শ্রান্তিহীন ফরিয়াদ করেছে, তেমনি বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাতেও তারা রয়েছেন ক্লান্তিহীন। আত্মার পরমাত্মীয় খালেদা জিয়ার প্রতি দেশবাসীর এ গভীর ভালোবাসার প্রতি স্থায়ী কমিটি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।’
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি খালেদা জিয়াকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়া, চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা, তার সম্মানে রাষ্ট্রীয় শোক ও ছুটি ঘোষণার জন্য। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মর্যাদা নন্দিত বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুসংহত রাখাসহ এ রাষ্ট্রের বিকাশের প্রতিটি স্তরে তার অসামান্য অবদানের স্মরণ পূর্বক একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে।
স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে খালেদা জিয়ার বিদায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার আজন্ম অবরুদ্ধ গণতন্ত্র আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় আমরা যদি আমাদের শপথ থেকে সামান্যতম বিচ্যুত হই, তাহলে ইতিহাসের কাছে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে না। দেশনেত্রীর প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে গণতন্ত্র আর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীর প্রতি ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছে।’
