দেশে এখন
0

হুমকির মুখে সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জলাশয় চলনবিল ও হালতিবিল

হুমকির মুখে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জলাশয় নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল। বিলের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে রেস্টুরেন্ট, পার্ক, স্টেডিয়ামসহ সরকারি বিভিন্ন দালান। এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে নদী কমিশন। তবে বিল দু'টি রক্ষায় চলনবিল অঞ্চলকে সংকটাপন্ন ঘোষণার দাবি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।

দেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জলাশয় নাটোরের চলনবিল। এর মাঝদিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক। পাশেই বিলের ওপর মাটি ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। গেল সরকারের এসব প্রকল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বিলের জীববৈচিত্র্যের ওপর। ব্যাহত হচ্ছে পানির প্রবাহ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী সরকারের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উদ্যোগে এসব প্রকল্প নেয়া হয়। এতে সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে বিলের পরিবেশ।

নাটোরের চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'এই বিলে যে পরিমাণ পানি থাকতো এখন কিন্তু তার গতিপ্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে। অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পগুলো করা হচ্ছে। এ কারণে বিল তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।'

এবার একটু নজর দেয়া যেতে পারে নাটোরের চলনবিলেরই আরেকটি অংশ হালতিবিলের দিকে। চারদিকে থৈ থৈ পানি, আর মাঝে জাহাজ আকৃতির ওয়েসিস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। সাবেক সংসদ সদস্য শিমুলের প্রভাব খাটিয়ে হোটেলটি নির্মাণ করেন আওয়ামী লীগ নেতা আশফাকুল ইসলাম। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল, কৃষি জমিতে পানি উঠে নষ্ট হচ্ছে ফসল।

নাটোরের কান্দিভিটা সম-উন্নয়ন মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মেহনাজ মালা বলেন, 'উন্নয়নগুলো অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। এবং এসব পরিকল্পনা করতে হলে এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তারা কী চায়, তাদের কথাগুলো শুনতে হবে। আমরা যদি তাদের কথা না শুনে কোনো উন্নয়ন করি, সে উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে না।'

জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, প্রতিবছর অন্তত ২০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয় এই বিলে। এতে মাছ শিকার করে জীবিকা চলে কয়েক লাখ মানুষের। কিন্তু বিলের মাঝে এমন স্থাপনায় ব্যাহত হচ্ছে মাছ উৎপাদন।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'চলনবিল ঐতিহ্যবাহী অনেকরকমের মাছের আধার। এখন সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে বিশেষ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।'

জেলা প্রশাসন বলছে, চলনবিল ও হালতি বিলে অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন। আগামীতে বিলে নতুন কোনো স্থাপনা যেন নির্মাণ না করা হয় সে বিষয় নজরদারির কথা জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, 'সামনের দিনগুলোতে আমরা অবশ্যই খেয়াল রাখবো যেন অপরিকল্পিতভাবে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে এই চলনবিলের সৌন্দর্য বিনষ্ট করা না হয়।'

আর প্রকল্প নির্মাণে অনাপত্তি দেয়া নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জানান, এরই মধ্যে হালতিবিল রেস্টুরেন্ট মালিককে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

নাটোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ওখানে যে শর্তভঙ্গ হয়েছে সেজন্য আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি। আমরা খুব তাড়াতাড়িই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।'

চলনবিল এবং হালতিবিলের যে অর্থনৈতিক গুরুত্ব, তা হয়তো দিন দিন শেষ করা হচ্ছে এমন সব স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করে। এতে করে প্রভাব পড়ছে বিল দু'টি অঞ্চলের নানা পেশার মানুষের ওপর। তাই বিল দু'টি রক্ষায় নতুন আর কোন স্থাপনা নির্মাণ না করে চলনবিল অঞ্চলকে সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণার দাবি বিল পাড়ের মানুষের।

এসএস