২০১৯ সালের ১৯ জুন রাজধানীর মিরপুর থেকে গুম করা হয় ব্যবসায়ী ও কিশোরগঞ্জের বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেনকে। স্বামী ইসমাইল হোসেনকে কীভাবে র্যাব পরিচয় দিয়ে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এখন টিভির কাছে সেই বর্ণনা দেন স্ত্রী নাসরিন জাহান।
তিনি বলেন, 'মাজার সংলগ্ন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছ মিল থেকে র্যাবের মাধ্যমে গুম হয়। র্যাব হেডকোয়ার্টারের কমিউনিকেশন এন্ড সিগন্যাল অফিসার রাসেল আহমেদ কবীরের নির্দেশে র্যাব-৪ এর নাঈম আমার স্বামীকে নিয়ে যায়। আনুমানিক দুপুর সোয়া ২টার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়, কিন্তু আমি বুঝতে পারি সন্ধ্যায়। আমার দেবর যখন বাসায় এসে বলে, ভাইয়া বাসায় আসেনি? ভাইয়ার চারটা নম্বরই বন্ধ।'
গুম হওয়ার পর শুরু হয় নাসরিন জাহানের জীবনযুদ্ধ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সন্ধানে ঘুরতে থাকেন সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে। এমনকি বাদ যায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসও। তবুও পাননি স্বামীর সন্ধান।
নাসরিন জাহান বলেন, 'আমরা র্যাব হেডকোয়ার্টার, ডিবি, সিআইডি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, নৌ বাহিনী ও সেনাবাহিনী প্রধানের কার্যালয় এমনকি প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও আমি নিজে অনেকবার দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কেউ কিছু বলে না।'
পুলিশের কাছে স্বামীর খোঁজ চাইতে গেলে হতে হয় হেনস্তার শিকার। নজরদারিতে নিয়ে আসা হয় নাসরিন জাহানের পুরো পরিবারকে। শুধু ভিন্নমতের কারণেই কি এত বড় সর্বনাশ হলো, প্রশ্ন নাসরিন জাহানের?
তিনি বলেন, 'আমার মোবাইল নম্বর, বাসা নজরদারিতে থাকতো। আমার মেয়ে কোচিংয়ে, কলেজে যেতে পারে না, তাকে বিভিন্নভাবে ফলো করা হয়। আমার স্বামী গুম হয়েছে সেটা একটা বিষয়। এর সাথে আমাদের জীবনটা নরকে পরিণত করে দিয়েছে তারা। সে সরকারের সমালোচনা করতো। সরকারের নেগেটিভ জিনিসগুলো আলোচনা করতো, এজন্যই তো সরকার আয়নাঘর তৈরি করেছে। কিন্তু, এটা কি তাদের অপরাধ ছিল?'
ইসমাইল হোসেন যখন গুম হন, কন্যা আনিশা ইসলাম ইনশা'র বয়স তখন ১২। বাবা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে জানে না সে। তাইতো বাবার অপেক্ষায় ঘরের বাহিরে তার কাতর চাহনি। বাবার স্মৃতি মনে পড়তেই চোখের জল যেন ঝড়ছে বৃষ্টি হয়ে।
আনিশা বলেন, 'বৃষ্টি হলে আমি ও আব্বু বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতাম। কিন্তু বাবা গুম হওয়ার পর থেকে আমি আর বান্দায় বসি না। আমি জানি না বাবা বেঁচে আছে না কি মারা গেছে। গুম শব্দটা আমার কাছ থেকে বাবাকে কেড়ে নিয়েছে।'
ইসমাইল হোসেনকে ফিরে পাওয়ার আশায় বিনিদ্র রজনী পার করছেন তার পরিবার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ইসমাইল হোসেনের সন্ধান ও দায়ীদের বিচার চান তার স্ত্রী ও সন্তান।
নাসরিন জাহান বলেন, 'আমার স্বামী বেঁচে থাকলে বের হয়ে আসবে। আশা করি বেঁচে আছে, এটা সত্যি। আর যদি সে বেঁচে না থাকে তাহলে তার মৃত্যুর একটা সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনবে এটাই দাবি এই সরকারের কাছে।'
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, 'যারা গুমের শিকার হয়েছেন, তাদেরও ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে আসার স্কোপ রয়েছে। তারা গুমের মামলা করতে পারেন।'
গুমের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সরকারের কাছে আইনি সহায়তার দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।