দেশে এখন
শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে প্রাণপণ চেষ্টা
শেষ মুহূর্তে বাড়ি যেতে মানুষের প্রাণপণ চেষ্টা। বাসের ছাদ, ট্রাক কিংবা ট্রেনে ঝুলে যে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফিরছেন। বাসে যেমন অতিরিক্ত ভাড়া তেমনি ট্রেনে টিকেট না পাওয়া। তবুও বাড়ি ফিরতে হবে নাড়ির টানে। যদিও ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি বাসে কিংবা ট্রেনে।

গাবতলী থেকে আমিন বাজার হয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের এই মহাসড়কে দেখা গেল ট্রাকে চেপে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। এসব বাহনের অধিকাংশ যাত্রীই খেটে খাওয়া মানুষ কিংবা গার্মেন্টস কর্মী।

বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আর টিকেট প্রাপ্তির বিড়ম্বনা এড়িয়ে ঘরে ফিরতে তাদের এমন তাড়া। স্বল্প আয়ের এসব মানুষগুলো আপনজনের কাছে ফিরছেন ঠিকই, কিন্তু খালি হাতে? নাকি কিনেছেন কিছু?

দিনাজপুর যাবেন শিরিন বেগম। বাড়তি টাকায় বাসের টিকেট না কিনে রাস্তার ধারে বিকল্প বাহনের অপেক্ষা। তবে দুই ঘণ্টায়ও মেলেনি কোনও বাহন।

তিনি বলেন, 'আমাদের যেতে হবে বাড়িতে। এখন অপেক্ষা করে থাকলেও যেতে।'

গার্মেন্টস কর্মী গাইবান্ধার রেহানা বেগমের গল্পও অনেকটা একই। ঈদের কেনাকাটায় বাড়তি খরচ, তার উপর দ্বিগুন বাসের টিকেট। তাই সাধ্যের কাছে হারমেনেছেন ঠিকই, তবুও ট্রাকে কিংবা বাসে ফিরতে হবে বাড়ি।

তিনি বলেন, 'আমরা তিনদিন হলো ঘুরতেছি টিকেটের জন্য। আর ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা করে টিকেটের দাম চাচ্ছে। এত টাকা দিয়ে বাসে যেতে পারবো না।'

যে শহর দিয়েছে আয়ের উৎস-কর্মের ঠিকানা, জীবন-জীবিকার তাগিদে বছরের পর বছর যেখানে টিকে থাকা। সেই পরিবেশ ছেড়ে শত কষ্টে হলেও খোলা আকাশ আর মুক্ত বাতাসে ছুটে চলা নাড়ির টানে আপন ঠিকানায়। বাস, ট্রাক, পিকআপভ্যানে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই ছুটেছেন।

একজন যাত্রী বলেন, 'রিক্সা চালায় ঢাকায়। আমার এমন সক্ষমতা নেই যে আমি ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা দিয়ে দেশের বাড়ি যাবো। যার কারণে এখন পিকআপভ্যানে করে দেশের বাড়ি গিয়ে ঈদ করবো।'

আরেকজন বলেন, 'আমাদের টাকা কম থাকায় কেনাকাটা করতে পারিনি। দেশের বাড়ি গিয়ে কেনাকাটা করবো।'

দেশে কখনোই ঈদ যাত্রা পুরোপুরি স্বস্তি দেয়নি। এবারও নেই তার ভিন্নতা। স্বাভাবিক সময়ে চাপ কম থাকলেও ঈদে পোশাক কারখানা ছুটির পর যাত্রীদের যে ঢল নামে, তা ছেয়ে যায় সড়কে-মহাসড়কে। সাভার, গাজীপুর ও এর আশপাশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা বেশি থাকায় এ পথের চিত্র বরাবরই এমন। তবে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা খুলনা, চট্টগ্রাম কিংবা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের স্বস্তি দিয়েছে এবারের ঈদে।

আরেকজন যাত্রী বলেন, 'সবাই যার যার মতো বাড়ি যাচ্ছে ঈদ করতে। একটু বিড়ম্বনা মেনে নিতে হবে। কারণ সবাই একসঙ্গে ঢাকা ছাড়তে গেলে জ্যাম পড়বে।'

সদরঘাটের ভিড় আগের মতো নেই এখন, যদিও চিরচেনা জৌলুস হারিয়েছে তবুও থেমে থাকেনি নদী পথের যাত্রা। তবে বাদুর ঝোলার তিক্ত ঐতিহ্য বদলায়নি ট্রেন যাত্রায়। ঝুঁকি আছে সাদে, তবু তা কে মানে? আর চাপাপাপি ঠেলাঠেলির দৃশ্য, যে রুপ ট্রেনের চিরচেনা। এসব দেখেও তা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

ট্রেন যাত্রী বলেন, 'এখন কষ্ট করে ট্রেনের ছাদে যাচ্ছি।'

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির বলেন, 'যাত্রীর চাপ ঠেকাতে আমরা হিমশিম খেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং টিটিই চেক করেছে কিন্তু যাত্রীর চাপ থাকার কারণে আমাদের কিছুই করার নেই।  যাত্রীকে তো আঘাত করা যায় না। আমরা চায় না কেউ ছাদে ভ্রমণ করুক। যাত্রীদের সচেতন হওয়া উচিত।'

উৎসবের নেই যেমন সীমানা, তেমনি পথের ক্লান্তি কখনও দূরত্ব কমায় না। যার জন্য দায়ি একমাত্র ভোগান্তি, আর অব্যবস্থাপনা। তবে শতক্লান্তি আর ভোগান্তি উপেক্ষা করে বাড়ি ফেরার যে তাড়না তা মানুষকে দেয় উৎসব উদযাপনের বাড়তি প্রেরণা। বাস, ট্রাক, ট্রেন জলে কিংবা আকাশপথ; সবই মাধ্যম মাত্র। তাই যাত্রার বাহনে ভিন্নতা থাকলেও, সবার উদ্দেশ্য ঈদ উদযাপন যার গন্তব্য পুরোপুরি অভিন্ন।

ইএ