নেত্রকোণার হাওরের বিস্তৃত ভূমি আগে বর্ষায় জলমগ্ন থাকলেও এখন পাল্টেছে দৃশ্যপট। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর রোগবালায়ের কথা মাথায় রেখে অনাবাদি এসব জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলনও হয়েছে ব্যাপক। জেলার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ কলমাকান্দার শত শত হেক্টর জমিতে লালিমা ও আন্ডার গোল জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয়েছে।
হাওরের তিন হাজার কাঠা জমিতে ১০ বন্ধুকে সাথে নিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন মোহাম্মদ ফয়সাল। বীজ, সারসহ তাদের খরচ হয়েছে ১৭ লাখ টাকা। উৎপাদন ভালো হওয়ায় অর্ধ কোটি টাকার বিক্রির আশা তাদের।
মিষ্টি কুমরা চাষী ফয়সাল, অনাবাদি জমিতে কুমড়া চাষ করে হয়েছেন লাভবান। ছবি: এখন টিভি
ফয়সাল বলেন, 'যা খরচ হয়েছে তা উঠে এখন আমরা লাভের মধ্যে আছি। সবকিছু মিলে আমরা ১০ জনের একেকজন ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে পাব।'
কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে বাজার দর ভালো থাকায় জমি থেকেই প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৬ টাকার মধ্যে। তবে এখন চাহিদা কমায় দাম কিছুটা কমেছে। তবুও প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৮ টাকার মধ্যে।
একজন কৃষক বলেন, 'দুই তিন বছর হলে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে।'
ঢাকা, যশোর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে হাওরের কুমড়া। মোকামগুলোতে এক ট্রাক মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে। চলতি বছর শুধু হাওরেই ৩৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
হাওরের অনাবাদি জমিগুলো পুরোপুরি চাষের আওতায় আনতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, 'যে জায়গাগুলো অনাবাদি ছিল, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সেখানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করিয়েছি। এবং তারা এটি চাষ করে আর্থিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে। কারণ এ ফসলে রোগ এবং পোকার আক্রমণ কম হয়।'
চলতি বছর জেলায় ৭২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৩০০ টন। এর বাজার মূল্য ৬৫ কোটি টাকা বেশি।