অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশের সামরিক বাহিনীর তরুণ অফিসারদের মধ্যে সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ড. ইউনূস আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে একটি শান্তিপূর্ণ উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করতে আমরা সেনাবাহিনীর সহায়তা একান্তভাবে কামনা করছি।’
এবারের কোর্সে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের মোট ৩১১ জন তরুণ সামরিক অফিসার অংশগ্রহণ করেন। কোর্স সম্পন্ন করা অফিসাররা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে কাজে লাগিয়ে দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:
কোর্সে অংশ নেয়া এক বাংলাদেশি অফিসার বলেন, ‘ডিএসসিএসসিতে নেতৃত্ব, কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছি, তা আমাদের দেশ ও দেশের বাইরে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে। বিশেষ করে জাতীয় সংকটের মুহূর্তে আমরা এই জ্ঞান প্রয়োগে প্রস্তুত।’
চীনের এক অংশগ্রহণকারী অফিসার বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ২৩টি দেশের সহকর্মীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া আরও গভীর করেছে। ভবিষ্যতে এই জ্ঞান আমাদের নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তায় কাজে লাগবে বলে আশা করি।’
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সামরিক শিক্ষায় উৎকর্ষের স্তম্ভ হিসেবে ডিএসসিএসসির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং নেতৃত্ব উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জাতির আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন।
গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এই কোর্সে অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প দেশের অগ্রগতিতে কাজে লাগাবেন। পাশাপাশি তিনি ডিএসসিএসসির আন্তর্জাতিক সুনামেরও প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কঠোর এক বছরের প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান অফিসারদের নিজ নিজ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি কোর্সের সফলতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী সদর দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সব অংশীজনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের একজনসহ মোট ১৪ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন—যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
সশস্ত্র বাহিনী কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১ হাজার ৪৬৫ জন বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৬ হাজার ৮১৪ জন অফিসার এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা (চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাচিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।





