উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

জাতিসংঘের অধিবেশনে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা

জাতিসংঘের চলমান সাধারণ অধিবেশনের আলোচনায় উঠে এসেছে বৈশ্বিক সংঘাত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সংকট। ৭৯তম অধিবেশনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। সাইড লাইনে বিভিন্ন দেশের নেতারা পারস্পরি সহযোগিতা ও সমস্যা সমাধানে আলোচনা করেছেন।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একত্রিত হন বিশ্ব নেতারা। বিশ্বের নানা সংকট ও সমস্যা সমাধানে আলোচনা করেন তারা। ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের মূলপর্ব শুরু হয় ২৪ সেপ্টেম্বর। ছয় দিনের এই কর্মসূচি চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর ৮৭ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও ৪৫ জন সরকারপ্রধানসহ শতাধিক নেতা সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।

বিশ্বনেতাদের আলোচনায় প্রধান্য পেয়েছ যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধের ইস্যু। গাজা-ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ছায়া যুদ্ধে প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাণিজ্যে। সংকট দেখা দিয়েছে পণ্য সরবরাহে।

এদিকে, হামাস ও হুতি বিদ্রোহীদের পর ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল। যা দেশটিকে সংকটের মুখে ফেলেছে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে উভয়পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধানের পথে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বনেতারা।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, 'লেবানন আজ এমন এক শত্রু পক্ষের শিকার হয়েছে, যারা ইলেকট্রনিক, সাইবার, সমুদ্র, বিমান ও স্থলভাগে হামলা চালাচ্ছে। সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করছে। লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তায় ইসরাইলের আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।'

মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। চলমান যুদ্ধ বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থার মহাসচিব। এছাড়া, যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতে মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে সুদান, মিয়ানমারসহ বেশ কিছু দেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান নেতারা।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'গাজার সংকট সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এখন লেবাননও একই অবস্থার দিকে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এসব সংঘাত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।'

সুদানের নারী অধিকারকর্মী নিসরিন এলসাইম বলেন, 'সুদানের শরণার্থী শিবিরের অবস্থা ভয়াবহ। নবজাতক সন্তানদের জীবন সংকটের মুখে পড়েছে। অসহায় অবস্থায় তাদের মায়েরা। এই অবস্থায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। সহিংসতা ও ধর্ষণসহ নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।'

এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নানামুখী সংকটের মুখে পড়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। দু'বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এখনও কোনো সমাধান আসেনি। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবারও পশ্চিমা নেতারা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের জন্য তাদের সহায়তার হাত আরও প্রসারিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'ইউক্রেনের পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে যৌথভাবে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। ভবিষ্যতেও ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। ইউক্রেনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য যা দরকার তার সবই করা হবে।'

বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বন্যা, খরা, দাবানল ও অতিবৃষ্টির কবলে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। বৈশ্বিক যুদ্ধ ও সংঘাতে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে বহু মানুষ। বৈষম্য বেড়েছে কয়েক গুণ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান নেতারা। এছাড়া সাধারণ পরিষদের বাইরে সাইড লাইনে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমস্যা সমাধানে বৈঠক করেন বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান।

এসএস