ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন বিমান বাহিনীর শক্তিশালী বি-টু স্পিরিট বোমারু বিমানের বহর। এই বিমানগুলোই ভূমধ্যসাগর হয়ে ইরানে গিয়ে তিন পরমাণু কেন্দ্রে হামলা করে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া। এই অপারেশনে মোট ১৮ ঘণ্টা উড্ডয়ন করেছিল এই বিমান। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার হামলার সময় সবশেষ উড়েছিল এই বিমান।
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও তেহরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়টি নিয়ে এখনও সরব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। হামলার পরে নেই তেজস্ক্রিয়তার কোনো চিহ্ন। এরপরও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া না গেলেও পরমাণু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তেই ছিল ইরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে তেহরান আবার পিছিয়ে গেছে। এখন কঠিন হবে ইরানের মজুত করা ইউরেনিয়াম খুঁজে বের করা।
পরমাণু বিশেষজ্ঞ টনি ইরউইন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, ইরান পরমাণু চুক্তিতে আসলো না, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকেও পর্যবেক্ষণ করতে দিল না। যুক্তরাষ্ট্রের হাশরাই বাঁধা দিল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে। শান্তিপূর্ণ কাজে যদি পরমাণু প্রকল্প চালু থাকে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধের প্রয়োজন পড়ে না। আণবিক শক্তি সংস্থা তো দাবি করেছে, ফোর্দোতে কোথাও কোথাও ৯০ শতাংশও সমৃদ্ধ করেছে। এটা শান্তিপূর্ণ হতে পারে না। মনে হচ্ছে, বোমা বানানোর প্রস্তুতিই চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে পিছিয়ে গেলো ইরান।’
আরো পড়ুন:
পরমাণু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কাছে ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ছিল। ১০টি পরমাণু বোমা তৈরির মতো প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম ইরানের কাছে ছিল। এই ইউরেনিয়াম ইরান আরও সমৃদ্ধ করেছিল কি না, আণবিক শক্তি সংস্থা জানে না। এটা যদি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে যায়, তবেই তা চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
টনি ইরউইন বলেন, ‘আপনি যদি ৯০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেন, এটা ইউএফ সিক্স বা ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইডে পরিণত হয়। যদি এগুলো বিশেষ সিলিন্ডারে রাখা হয়, কয়েকটি সিলিন্ডার প্রয়োজন পড়বে। সিলিন্ডারে ভরে ফেললে এগুলো যেকোনো স্থানে নেয়া সম্ভব। হতেই পারে সেন্ট্রিফিউজ প্ল্যান্ট থেকে সেগুলো সরিয়ে অন্য কোথাও রেখেছে ইরান।’
পরমাণু বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান কিংবা পুরো বিশ্ব যদি বলেও থাকে পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই ধ্বংসাবশেষের কোনো হদিস নেই। যে কারণে খুবই সম্ভাবনা আছে, ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করে সেগুলো অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস করে থাকে, সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস করেছে, পরমাণু ফ্যাসিলিটি ধ্বংস করেছে। এখন আরও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ইরানের জন্য কঠিন হবে। কিন্তু পরমাণু বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম ইরানের আছে বলেই দাবি তাদের।
আরো পড়ুন:
টনি ইরউইন বলেন, ‘১০টা বোমা বানানোর ইউরেনিয়াম ইরানের কাছে থাকলেও সেটা কোথায় আছে, খুঁজে পাওয়া কঠিন। ৯০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ থাকলেও সেটা ইউএফসিক্স ফর্মে আছে। এটাকে বোমা বানানোর প্রক্রিয়া আরও সময়সাপেক্ষ, তাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন, যেটা এখন ইরানের নেই। হিরোসিমায় যে বোমা ফেলা হয়েছিলো, তেমন একটা বোমা তৈরি করা যাবে। কিন্তু অত্যাধুনিক বোমা তৈরি সময়সাপেক্ষ।’
গতকাল (রোববার, ২৩ জুন) ইরানের তিন পরমাণু কেন্দ্র ফোর্দো, নাতানজ আর ইসফাহান লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ফেলা হয় বাঙ্কার বাস্টার বোমা।