গাজায় ৩৫ হাসপাতাল ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের নয়শ’ কেজি বোমা ব্যবহার

গাজায় খাবার দিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনি ছয় ভাই
গাজায় খাবার দিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনি ছয় ভাই | এখন টিভি
0

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতাল ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি নয়শ’ কেজিরও বেশি বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাসপাতালেও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ও জরুরি চিকিৎসাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে নিন্দার ঝড় বইছে গোটা বিশ্বে। এর মধ্যেই রোববার (১৩ এপ্রিল) ক্ষুধার্তদের খাবার বিতরণ করা আপন ছয় ভাইসহ অন্তত ৩৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এদিকে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথিরা।

বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে গাজার দেইর আল-বালাহ। বর্বর ইসরাইলি বাহিনী একসঙ্গে আপন ছয় ভাইকে হত্যা করায় এই শোক আবহ।

শোকাহত মা-বাবাসহ পুরো এলাকাবাসী। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের মাঝে খাবার বিতরণ করায় তাদের উপর বোমা মেরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

নিহতের বাবা বলেন, 'আমার ছেলেরা মানুষের জন্য খাবার তৈরি করে বিতরণ করতো, তারা অস্ত্র বহন করতো না। প্রতিরোধ যোদ্ধা হয়েও প্রতিদিন আমার ছেলেদের মতো অনেককে প্রাণ দিতে হচেছ।'

স্থানীয় একজন বলেন, 'নিজেরা অনাহারে থেকে হলেও তারা ক্ষুধার্ত, আহত, বাস্তুচ্যুত ও ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের মাঝে খাবার ও পানি পরিবেশন করতো। এই দুর্ভিক্ষের মধ্যে দখলদাররা তাদের হত্যা করলো।'

মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গাজাকে পৃথিবীর নরকে পরিণত করেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতাল বোমা মেরে ধ্বংস করেছে ইসরাইল। যার মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বোমার ব্যবহার হয়েছে নয়শ কেজিরও বেশি। ১৯৪৯ সালে স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা কর্মী এবং রোগীদের উপর আক্রমণকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও তার তোয়াক্কা করছে না ইসরাইলি বাহিনী।

সবশেষ রোববার উত্তর গাজায় একমাত্র কার্যকর আল-আহলি হাসপাতাল ধ্বংস্তূপে পরিণত করায় চিকিৎসার অভাবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অন্তত ১০ লাখ বাসিন্দার হাসপাতালটি অকেজো হওয়ায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। 'কঠোর ভাষায়' নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, মিশর, জার্মানি, জর্ডান, কাতার, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য।

শুধু তাই নয়, গত ২৩ মার্চ ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যার বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায়। ওইদিন প্রাণে রক্ষা পাওয়া ৪৭ বছর বয়সী জরুরি চিকিৎসাকর্মী আসাদ আল-নসারাহকে চোখ বেধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। হত্যা ও জোরপূর্বক অপহরণের এ ঘটনাকে মানবতার চরম লঙ্ঘন বলেও আখ্যা দেয়া হয়েছে। তাই আসাদকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য ইসরাইলকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রেড ক্রস কর্তৃপক্ষের।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করছে মিশর ও কাতার। কয়রোতে হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিদের মধ্যে দর-কষাকষি। যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইতিবাচক হলেও নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলে নানা ফন্দি আটছে ইসরাইল। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরাইলি বাহিনী দখলদারিত্ব অভিযান অব্যাহত রেখে বাড়িঘর যেমন কেড়ে নেয়া হচ্ছে; তেমনি হত্যাও করা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের।

এদিকে গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরাইলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। হুতিদের এই হামলায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। তবে হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

গাজাবাসীর পক্ষ্যে ইয়েমেনের হুথিরাও ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করায় গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে হুথিরাও। সবশেষ য়েমেনের রাজধানী সানার কাছে একটি কারখানায় মার্কিন হামলায় নিহত বেশ হয়েকজন হতাহতের শিকার হয়েছেন।

এসএস