যুদ্ধবিরতির মধ্যেও নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই গাজার ফিলিস্তিনিদের। চুক্তি লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসের আল-ফাকুরি অঞ্চলের ফের বোমা হামলা করে ইসরাইল। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহতের খবর মেলে।
উপত্যকাটিতে আগের রূপে ফিরে আসতে পারে ইসরাইলি সেনারা, এমন শঙ্কা গত কয়েকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। আর সেই শঙ্কাকে আরও জোরালো করতে ইতোমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, হামাস যদি নির্ধারিত সময়ে বন্দিদের মুক্তি না দেয় তবে সমাপ্তি ঘটবে যুদ্ধবিরতির, নরকে পরিণত হবে গাজা।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি হোক কিংবা নিজেদের কৌশলে, হামাসের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে শনিবার ষষ্ঠ দফায় আরও তিন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম দ্য হারেৎজ নিউজ। যদিও এর আগে বন্দিদের মুক্তির সময় পেছানোর ঘোষণা দিয়েছিল হামাস।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নিতে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি অব্যাহত রয়েছে। কখনও বলছেন, গাজা পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে পাঠিয়ে দেবেন তিনি। কখনও তাদের সৌদি আরবে আবাস গড়ার কথা বলেন। কখন গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চান আবার কখনও গাজাকে কিনে নিতে চান ট্রাম্প। এসব বলে প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে ইসরাইলও। হামাস চুক্তি বিলম্বিত করলে ফের গাজায় হামলা চালানোর হুংকার তোলে তেল আবিব।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কেতজ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত আমরা। হামাস যদি বন্দিদের মুক্তি না দেয়, গাজাবাসীর জন্য দোজখের রাস্তা খুলে যাবে। গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তত রয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এবার কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে হামাসের জন্য।'
তবে ট্রাম্প ও ইসরাইলের কোনো প্রস্তাবেই রাজি নন আরব বিশ্বের নেতারা। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতারে ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল ঘেইত বলন, 'ট্রাম্পের কথাকে কখনোই গুরুত্বসহকারে আমলে নেইনি। কারণ এখনও তিনি মধ্যস্থতার মধ্যেই রয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে পুনর্বাসন আরব লীগ কখনও সমর্থন করে না। কেবল মাত্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এর একমাত্র সমাধান।'
শুধু আরব লীগ নয় জাতিসংঘও ফিলিস্তিনিদের জোর করে প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির সহকারী মুখপাত্র এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
জাতিসংঘের সহকারী মুখপাত্র ফারাহ হক বলেন, 'গাজা থেকে জোড় করে ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরানোর বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বিরোধিতা করছেন। ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে এর কোনো সমাধানে আসা যায়।'
গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যে খেলায় মেতেছে তা রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে ইরান। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তেহরানের সেনাদের আরও দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্রসহ অস্ত্রভাণ্ডার আরও বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছেন খামেনি।