ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় বাস্তুচ্যুত ও স্বজনহারাদের একজন মাহমুদ আবু দালফা। ২০২৩'র ডিসেম্বরে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তছনছ করে দিয়ে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। নিহত স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানসহ পরিবারের ৩৫ সদস্যের কবরও দিতে পারেননি। জীবন রক্ষায় ছুটেছেন এক শহর থেকে অন্য শহরে।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ১৩ মাস পর মাটিতে মিশে যাওয়া বসতভিটায় ফিরেছেন মাহমুদ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খুঁজছেন স্বজনদের দেহাবশেষ। যা সমাহিত করতে চান কবরে।তবে খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরানোর এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি।
মাহমুদ বলেন, 'আমার স্ত্রী-সন্তানরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে। আমি তাদের বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের কারণে তা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে শহীদদের বের করার জন্য আমাদের কাছে ভারী উদ্ধার সরঞ্জাম নেই। এই মুহূর্তে অনেক ভারী উদ্ধার সরঞ্জাম প্রয়োজন।'
এই মুহূর্তে নিজ বাড়িতে ফিরে মাহমুদের মতো, ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনের নিথর দেহাবশেষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন আরও বহু গাজাবাসী। গলিত মরদেহ উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবকরাও। এমনকি যেসব আত্মীয়-স্বজনের কবর দিয়ে গেছেন সেই কবরের সন্ধান চালাচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমি আমার মা এবং ভাইয়ের কবর খুঁজতে এসেছি। ইসরাইলিরা বুলডোজার দিয়ে সব গুঁড়িয়ে দেয়ায় আমরা কবরটি পাইনি।'
যুদ্ধবিরতির জন্য ফিরে আসা গাজার একজন বলেন, 'ইসরাইলি আগ্রাসনে হারানো প্রিয়জনদের কবর টুকুই আমাদের কাছে এখন শেষ স্মৃতি চিহ্ন। যা দেখে বাকি জীবন কাটানোর জন্য কবরের খোঁজ করছি। এর কোনো বিকল্প নেই।'
এদিকে ধ্বংস্তুপে রূপ নেয়া নিজ ঘরে ফিরে কোনোরকমে মাথা গোজার ঠাঁই করে নিতে ব্যস্ত সর্বহারা মানুষেরা। ১৫ মাসের বেশি সময় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুর্বিষহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো এই বাসিন্দারা আজ বড় ক্লান্ত।
স্থানীয় একজন বলেন, 'মানসিকভাবে আজ আমরা অনেক ক্লান্ত। এই বিধ্বংসী পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই, সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। সৃষ্টিকর্তাই আমাদের একমাত্র ভরসা।'
২৩ লাখ গাজাবাসীর জীবনযুদ্ধের এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে খাবার, ওষুধ, সুপেয় পানি ও জ্বালানিসহ সব মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে রোববার থেকে ঢুকছে শতশত ত্রাণ বোঝাই ট্রাক। যেসব ট্রাক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গাজায় ঢুকতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অসহায় মানুষরা।