ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন বেনিইয়ামিন নেতানিয়াহু। তিন দফায় ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। টানা এক যুগ ধরে তার দল লিকুদ পার্টি ইসরাইলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি আগ্রাসনে ভাটা পড়ে নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায়।
মূলত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হলে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এমনকি তার পদত্যাগের দাবিতে ইসরাইলেও বিক্ষোভে নামে হাজারও মানুষ। নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে সব মহলে। তবে কোনোকিছুই তোয়াক্কা না করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ প্রসারিত করে যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহু এবার বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য দিতে প্রথমবারের মতো আদালতের কাঠগড়ায় তিনি। ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণা তিনটি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়। ২০২০ সালে শুরু হওয়া মামলার বিচারকাজ বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছে।
তার আইনজীবীদের দাবি, যুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক চাপে আছেন নেতানিয়াহু। তাই এসব মামলায় মোকাবিলায় তিনি এখনও প্রস্তুত না। তবে ইসরাইলের শীর্ষ আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর তাকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা বিচারাধীন।
ইসরায়েলের আইনমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন বলেন, 'সাংবিধানিক বিপ্লব ও সরকারের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়বে। সাধারণ মানুষের আস্থা চলে যাবে বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে। যা ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।'
কেস ১০০০ নামে গিফটস অ্যাফেয়ার মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আস্থা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী দুই ধনী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক লাখ ৮৬ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের বিলাসবহুল উপহার গ্রহণ করেছেন। মিডিয়া চুক্তি নামে দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর অনুকূলে সংবাদ প্রকাশের জন্য সংবাদপত্র ইডিয়থ আহরনথের মালিকের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। সবশেষ টেলিকম দুর্নীতি মামলায় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বেজেককে নিয়ন্ত্রক সুবিধা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
এর আগে গাজায় গণহত্যা চালানোর দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। যদিও সব অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন নেতানিয়াহু।