ইদলিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বাশার আল আসাদ বিরোধী জোট হায়াত তাহরির আল সামের সদস্যদের লক্ষ্য করে এভাবেই বিমান হামলা করেছে রাশিয়া আর সিরিয়ার সামরিক বাহিনী। এতে বিদ্রোহীদের পুরোপুরি দমন করা না গেলেও বাড়ছে সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার সংখ্যা। হোয়াইট হেলমেট বাহিনী বলছে, ইদলিবে বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল সংঘাতে জড়িয়েছে বিদ্রোহীরা। বিপাকে পড়ে দৌড়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ইদলিব থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। রাস্তাঘাট ছাইয়ে ভরে গেছে, যানবাহন জ্বলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, হামলায় এইচটিএস বাহিনী কিছুটা কোণঠাসা হয়ে গেলেও তারা হামলা করছে আলেপ্পো আর হামাতেও। এরপরও সব স্থানেই চলছে বিদ্রোহী আর সিরীয় সেনাদের বিরুদ্ধে তুমুল সংঘাত। বিরোধী নেতা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এবার সিরিয়াকে স্বাধীন করবেন তারা।
এদিকে সিরীয় সেনাদের সহযোগিতা করতে সোমবার (২ ডিসেম্বর) দেশটিতে অনুপ্রবেশ করেছে ইরান সমর্থিত ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনী। এই যুদ্ধে এবার অংশ নিচ্ছে কাতায়েব হিজবুল্লাহ, নুজাবা গ্রুপসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের কয়েকশ যোদ্ধা। দামেস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, আলেপ্পো আর ইদলিবের পর হামাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানের বিরোধিতা করে আসলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চান তারাও।
যুদ্ধে রাশিয়া আর ইরান পূর্ণ সমর্থন দিলেও এবার আর এগিয়ে আসছে না পুরনো বন্ধু হিজবুল্লাহ। সিরীয় সেনাদের সমর্থনে তারা পাঠাচ্ছে না যোদ্ধাদের। সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সের বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইসরাইলের সঙ্গে এক বছরের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ নিজেই বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আপাতত ইরানের পক্ষ থেকেও সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে তেহরান। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, যুদ্ধ নয়, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সব করবে তেহরান।
গেলো কয়েক বছরের মধ্যে আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের হামলা বাশার আল আসাদ সরকারের জন্য বড় ধাক্কা। এর আগে ২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আলেপ্পো দখলে নিতে গিয়ে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। সিরিয়ায় আসাদ সরকার বিরোধী বিভিন্ন পক্ষ বলছে, হিজবুল্লাহ আর ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনী ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে ব্যস্ত থাকায় বিদ্রোহীরা এতো সহজে আলেপ্পোতে হামলা চালাতে পেরেছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, সিরিয়াতে বিদ্রোহীদের এই আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে। আরব দেশগুলো আর ওয়াশিংটন বলছে, হিজবুল্লাহ'র দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইরান থেকে আসাদ বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ কাজে লাগাবে বিদ্রোহীরা। রয়টার্সের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আসাদ প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার চিন্তা করছে বাইডেন প্রশাসন। যেন তেহরানের ওপর সিরিয়ার নির্ভরশীলতা কমে। এদিকে, তুরস্ক বলছে, সিরিয়ার সাধারণ মানুষের দাবি মেনে একটি চুক্তিতে পৌঁছালেই চলমান অস্থিরতা শেষ করা যায়।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, বিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে না আসার কারণেই সিরিয়া সরকার বিপাকে পড়েছে। আসাদের সমর্থক দেশ ইরান ও রাশিয়া এই সংকট সমাধানে তুরস্ককে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করে আসছে। যদিও সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান পরিষ্কার না, তবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই চায়, আসাদ সরকার ক্ষমতায় থাকুক কিন্তু কমে যাক ইরানের প্রভাব।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে আসাদ সরকারকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে ইরান আর হিজবুল্লাহ। কিন্তু সিরিয়ায় তাদের সমরাস্ত্রের জাহাজ আর ঘাঁটিতে অনবরত হামলা করে এই অঞ্চলে তেহরানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছে তেল আবিব।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র বলছে, হিজবুল্লাহ সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার কারণেই বিদ্রোহীরা আলেপ্পো আর ইদলিবে আকস্মিক এই অভিযান চালাতে পেরেছে।