২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে চালানো হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলা হয় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর বেশিরভাগ সময় তিনি গাজার সুড়ঙ্গের ভেতরই কাটিয়েছেন। ৬১ বছর বয়সী এই নেতার যৌবনের ২২ বছর কেটেছে ইসরাইলের একটি কারাগারে। গেল জুলাই মাসে সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর সংগঠনটির দায়িত্ব পান সিনওয়ার।
প্রায় এক বছর পর তাকে খুঁজে পায় ইসরাইল। রাফাহ অঞ্চলের তাল আল-সুলতান এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন হামাস সদস্য। এদের মধ্যে একটি মরদেহ সিনওয়ারের চেহারার সঙ্গে অদ্ভুত মিল খুঁজে পায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তার আঙুলের একটি অংশ ডিএনএ পরীক্ষার পর তারা নিশ্চিত হয়, এটি আর কারও নয়, সিনওয়ারের মরদেহ। পরবর্তীতে তার মরদেহ ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিনওয়ারের মরদেহ কোথায় আছে এবং কী করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট করেনি ইসরাইল। দেশটি সাধারণত ফিলিস্তিনি নেতাদের মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখে। ইসরাইলিদের ধারণা, শীর্ষ নেতাদের মরদেহ নিয়ে আন্দোলন দানা বাধবে এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এদিকে হামাসও বন্দি বিনিময় বা যুদ্ধের বিভিন্ন চুক্তির জন্য ইসরাইলি সেনাদের মরদেহ সংরক্ষণ করে রেখেছে। এখন ইসরাইল কী করবে সেটি দেখার বিষয়।
এদিকে সিনওয়ারের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. চেন কুগেল জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন সিনওয়ার। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মৃত্যুর প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর সিনওয়ারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ ইসরাইলিরা নিয়ে যায়। তবে কোথায় আছে কেউ জানে না।
ইসরাইলের ন্যাশনাল ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. চেন কুগেল বলেন, 'মাথায় বুলেটের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। ব্রেইনে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তার ডানহাত ও বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার শরীর ও বুকেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে তার মৃত্যু হয়েছে মাথায় বুলেটের গুলিতে।'
গেল ১৭ অক্টোবর সিনওয়ার হত্যার শেষ মুহূর্তের একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে ইসরাইল। যেখানে তাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় লাঠি হাতে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। তবে এরপরও ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, কাপুরুষের মতো মৃত্যু হয়েছে সিনওয়ারের।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, 'সিনওয়ার জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। একজন কমান্ডার হিসেবে মারা যায়নি সে। বরং কাপুরুষের মতো মৃত্যু হয়েছে তার। শত্রু পক্ষের জন্য এটি আমাদের পরিষ্কার বার্তা।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিনওয়ারকে ইসরাইলি ভূখণ্ডের অজ্ঞাত কোনো স্থানে দাফন করা হতে পারে। আল–কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকেও হত্যা করার পর দ্রুত কবর দেয়া হয়। এদিকে গেল জুলাইয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মরদেহ হাতে পায়নি ইসরাইল। তাকে সমাহিত করা হয় কাতারের রাজধানী দোহায়। হানিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে শোক জানিয়েছে।