গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে একদিনের স্থগিতাদেশ

ত্রাণের খাবার নিতে দাঁড়িয়ে আছে গাজার শিশুরা
ত্রাণের খাবার নিতে দাঁড়িয়ে আছে গাজার শিশুরা | ছবি: সংগৃহীত
0

বিতর্কের মুখে এবার গাজায় মার্কিন সমর্থিত ইসরাইলের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম একদিনের জন্য স্থগিত করলো গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণার পর শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। জাতিসংঘ বলছে, সহায়তা কেন্দ্রে হামলা চালানো যুদ্ধাপরাধের শামিল। এছাড়া গাজায় নিঃস্বার্থ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ।

গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দেয় ইসরাইল। অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছে শতাধিক নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সীমিত পরিসরে গাজায় সহায়তা পাঠানোর অনুমতি দিতে বাধ্য হয় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। তবে তা গাজাবাসীর চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য।

এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করে ইসরাইল। গেল সপ্তাহে তিনটি কেন্দ্রে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ। তাদের ত্রাণ বিতরণকে সামরিক ও রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে এতে অংশ নিতে অসম্মতি জানায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ও বেশ কয়েকটি দেশ। ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি সেনাদের নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনা এই কার্যক্রমকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।

এবার মার্কিন-ইসরাইল যৌথ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বুধবার একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সহায়তা কেন্দ্রের অঞ্চলগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে আইডিএফ। এসব অঞ্চলে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভ্রমণ ও প্রবেশাধিকার। জিএইচএফ জানায়, ত্রাণ কার্যক্রমের সংস্কার, পুনর্গঠন ও দক্ষতা উন্নয়নে এই অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জরুরি ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।

তবে সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে ইসরাইল বলছে, হামাসকে এড়িয়ে গাজার বেসামরিক মানুষদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে তারা। ইসরাইলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, ত্রাণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে হামাস।

ইসরাইলে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল বলেন, ‘সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো, জিএইচএফের বিরুদ্ধে কাজ করছে জাতিসংঘও। গাজার জনগণের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘ ও হামাস উভয়ই ত্রাণ বিতরণে পুরানো মডেলের ওপর জোর দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন জাতিসংঘ কি সত্যিই গাজার জনগণকে সহায়তা সরবরাহ করার বিষয়ে চিন্তা করে।’

ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার জানান, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলি সেনাদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করেছিল অনেক ফিলিস্তিনি। তখন আত্মরক্ষায় গুলি ছুড়ে সেনারা। এদিকে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলিদের গুলি চালানোর ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি সেনাদের হামলার বিষয়ে অবগত আছে যুক্তরাষ্ট্র। এর সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মিডিয়ার কিছু অংশ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হতে পারে। আর হামাসে কথা তো বিশ্বাস করা যাবে না। ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছি।’

ক্ষুধার্ত ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার ঘটনা স্বাধীনভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ ধরনের হামলা মেনে নেয়ার মতো না। আর জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ সহায়তায় বাধা দেয়া যুদ্ধাপরাধের শামিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বরেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের খাদ্য ও অন্যান্য জীবন-রক্ষাকারী ত্রাণ সরবরাহে ইসরাইলের ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টি করা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। অনাহারের মুখে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি যুদ্ধাপরাধের শামিল। আন্তর্জাতিক আইনে ইসরাইল গুরুতর অপরাধ করছে।’

ইসরাইল নতুন করে খান ইউনিসসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। অবিলম্বে এসব অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই সহায় সম্বল নিয়ে যে যেভাবে পারছে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। যদিও গাজায় এই মুহূর্তে নিরাপদ কোনো স্থান নেই।

সবশেষ মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের খুব কাছে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল গাজায় মানবিক সহায়তা শুরুর পর এ নিয়ে অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজা কর্তৃপক্ষ।

এসএস