মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইরানের হামলার পর লেবাননে সেনা অভিযান জোরদার করেছে ইসরাইল

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর লেবাননে সেনা অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। এতে, নতুন করে আরও নয়জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। আইডিএফ জানিয়েছে, লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে এই সেনা অভিযান। এদিকে, স্যাটেলাইট ছবিতে ফুটে উঠেছে তেলআবিবে বিমানঘাঁটিতে ইরানি হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, প্রতিশোধ হিসেবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ছক কষছে ইসরাইল।

ইসরাইলের মুহুর্মুহু বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে কাঁপছে লেবানন। দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও রাজধানী বৈরুতে বেড়েছে হামলার তীব্রতা। বিমান হামলায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বৈরুতের দাহিয়েহ শহরতলীর। আগ্রাসনের মাত্রা যতো বাড়ছে ততোই দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা।

এরইমধ্যে হিজবুল্লাহবিরোধী অভিযান আরও জোরালো করতে দক্ষিণের নাবাতিহসহ আরও বেশ কয়েকটি শহর থেকে অন্তত এক লাখ বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কও করেছে দখলদাররা। যদিও গত দুই সপ্তাহে ইসরাইলের বর্বর হামলায় বাড়ি-ঘর ছাড়া হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন ১২ লাখের বেশি মানুষ।

লেবাননে যত বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, ততোই নিজেদের শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরাইলি সেনাদের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবারও (৩ অক্টোবর) রকেট হামলা চালানোর দাবি করছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠনটি।

এর আগে বুধবারের (২ অক্টোবর) স্থল অভিযানে হিবুল্লাহর হাতে প্রাণ গেছে অন্তত আট ইসরাইলি সেনার। তেল আবিবকে লক্ষ্যবস্তু করে ড্রোন হামলা চালানোর দাবি ইয়েমেনের হুতিদেরও। আগ্রাসন বন্ধ না করলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে হুতিরা। তবে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত কিছুতেই অভিযান বন্ধ করবে না সাফ জানিয়েছে ইসরাইলও।

ইয়েমেনের হুতির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয়া বলেন, 'ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিম তীর এবং লেবাননে আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের বিরুদ্ধে আমাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে গাজা উপত্যকা ও লেবাননে আগ্রাসন বন্ধ না করলে আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে হামলা চালিয়ে যাবো।'

ইসরাইলের জেনারেল স্টাফের প্রধান হার্জি হালেভি বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো পয়েন্টে পৌঁছে আঘাত করার সক্ষমতা আছে ইসরাইলের। শত্রুরা এখনও এটি বুঝতে পারেনি। তবে খুব শিগগিরই তারা তা টের পাবে। ইসরাইলি বাহিনী গাজা উপত্যকা, লেবাননসহ প্রায় সব সীমান্তে একসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাদের কোনো বিরতি নেই।'

এদিকে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর ইরান-ইসরাইল উত্তেজনাও চরম পর্যায় পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করে ইরান। তবে তেল আবিব ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার না করলেও স্যাটেলাইটে তোলা বেশ কয়েকটি ছবির বরাত দিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। যেখানে দাবি করা হয়, ওই দিনের ইরানি হামলায় ইসরাইলের নেভাতিম বিমানঘাঁটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিমানঘাঁটির প্রধান রানওয়ে।

এ অবস্থায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ছক আঁকছে ইসরাইল। তবে এতে সমর্থন দেবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে জড়াতে না চাইলেও তেল আবিবের যেকোনো আক্রমণের কঠোর জবাব দিতে তেহরান প্রস্তুত বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক পোস্টে দেখা গেছে, ইরানের 'হিট লিস্টে' রয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।

এদিকে, লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আগেই সতর্ক করেছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।

এসএস