দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর ত্যাগকারীদের এখন কোনো গন্তব্য নেই। নবজাতকের জন্য নেই পর্যাপ্ত খাবার। সবমিলিয়ে এই উপত্যকায় কোনো আশার আলো দেখছেন না বাসিন্দারা।
গাজার এক বাসিন্দা বলেন, 'আমরা কোথাও নিরাপদ নই। কোথায় গেলে প্রাণে বাঁচবো, আপনারাই বলে দিন। রাফা, দেইর-আল-বালাহ, আল-মাওয়াসি থেকে ফিরে এসেছি। ইসরাইলি সেনারা মিথ্যা বলছে। আমাদের কোথাও থাকতে দিচ্ছে না তারা।'
আল মাওয়াসি শহরে দুই ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর দক্ষিণ গাজা থেকে আবারও ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়া নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। তারা বলছে, যেকোনো সময় এই এলাকায় মর্টার ও রকেট হামলা চালাতে পারে হামাস। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট ছিল যুদ্ধের শুরু থেকেই। পুষ্টিহীনতা ও চর্মরোগে ভুগছে অসংখ্য শিশু। আর এখন চোখ রাঙাচ্ছে মহামারির আতঙ্ক। ২৫ বছর পর গাজায় এই প্রথম দেখা দিয়েছে পোলিও। এতে আক্রান্ত ১০ মাসের একটি শিশুর তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডা. আফিফ আতাওনেহ বলেন, 'গাজা উপত্যকা থেকে আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। নমুনাগুলো জর্ডানে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গতকাল রাতে জানতে পেরেছি, পাঠানো নমুনার মধ্যে দেইর আল-বালাহর ১০ মাস বয়সী শিশুর দেহে পোলিও ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।'
গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, উপত্যকায় একজন রোগী শনাক্তের অর্থ হচ্ছে সেখানে পোলিও আক্রান্ত আরও অনেক রোগী থাকতে পারে। যাদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। যুদ্ধের শুরু থেকেই এ ধরনের মহামারির আশঙ্কা করছিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পোলিও মহামারির আকার ধারণ করার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। মানবিক সংকট বিবেচনায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে পোলিও টিকাদান অভিযান শুরুর আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, 'এই ক্যাম্পেইনের আওতায় গাজার ১০ বছরের কম বয়সী ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে ভ্যাক্সিন দেয়া সম্ভব হবে। গাজার মানবিক সংকট বেড়েই চলেছে। একসময় মানুষ ভেবেছে গাজার পরিণতি এরচেয়ে আর ভয়াবহ হতে পারে না। কিন্তু, আমরা দেখেছি, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। দিয়ের আল-বালাহ'র নর্দমার পানিতে প্রথম পোলিওর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরমানে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। হাজার হাজার শিশুর প্রাণ বিপন্ন হতে পারে।'
এদিকে বারবার ভেস্তে যাওয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে এবার একটি সমাধানে আসার বিষয়ে আশাবাদ জানিয়েছে মধ্যস্ততাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার। গেল শুক্রবারের আলোচনা থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক সিদ্ধান্ত এসেছে বলে দাবি করছে তারা। এমন বাস্তবতায় আগামী সপ্তাহে আবারও কাতারের দোহায় বৈঠকের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আলোচনা থেকে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে ইসরাইল সফরে যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। মেরিল্যান্ডে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার আগে সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জো বাইডেন বলেন, 'যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি আশাবাদী, আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।'
যুদ্ধবিরতির বিষয় মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে এর আগে অসংখ্যবার ইতিবাচক মন্তব্য করা হলেও ইসরাইল-হামাসের বিরোধিতায় বারবার পিছিয়েছে আলোচনার দিনক্ষণ। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিলেও গাজার যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে।