বিশ্বের ধনী দেশের তালিকায় ৩২তম অবস্থানে রয়েছে ইসরাইল। দেশটির ৫২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির বড় একটি অংশ দখল করে আছে প্রযুক্তি বাজার। তবে চলমান যুদ্ধে হোঁচট খেয়েছে দেশটির সার্বিক অর্থনীতি।
গত অক্টোবর থেকে গাজায় মোতায়েন ৩ লাখ ৬০ হাজার কর্মীর খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তেল আবিব। যুদ্ধকালীন সংকট মোকাবিলায় গত ডিসেম্বরে জরুরি ভিত্তিতে ৭৮৫ কোটি ডলারের তহবিল চায় নেতানিয়াহু সরকার। ব্যাংক অব ইসরাইলের দাবি, যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে যুদ্ধে ইসরাইলের খরচ হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
এমন অবস্থায় ইসরাইলের অনেক প্রতিষ্ঠান পড়েছে অনিশ্চয়তায়। নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে যুদ্ধের মধ্যেও রমরমা ব্যবসা করছে ইসরাইলের প্রযুক্তি খাত। যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ। শ্রমবাজারের ১৪ শতাংশ কর্মী এই খাতের। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তির বাজার ইসরাইলে। গুগল থেকে অ্যাপল, আইবিএম থেকে মেটা, মাইক্রোসফ্ট থেকে ইন্টেল করপোরেশন এরকম পাঁচশরও বেশি বহুজাতিক সংস্থা ইসরাইল থেকে পরিচালিত হয়।
যুদ্ধের মধ্যেও এসব কোম্পানি বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইসরাইলের প্রযুক্তি খাতকে সহায়তার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যেখানে ২২০টিরও বেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এতে সম্মত হয়। যারা মূলত স্টার্ট-আপ বা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে।
চলমান যুদ্ধে ইসরাইলি অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। হোটেল, রেস্তোঁরা, দোকান, পর্যটন এলাকা একেবারে ফাঁকা। এয়ারলাইন্সগুলোর বেশিরভাগ ফ্লাইটই বাতিল হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর আগে ইসরাইলে প্রতি মাসে পর্যটক আসতো ৩ লাখের বেশি। গত নভেম্বরে সেটি নেমে এসেছে মাত্র ৩৯ হাজারে।
ইসরাইলের জিডিপিতে নির্মাণ শিল্পের অবদান ১৪ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকেই নির্মাণ প্রকল্পের বহু কাজ বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের কাজের পারমিট বাতিল করায় শ্রমিক সংকটে পড়েছে দেশটি। নির্মাণ খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী ফিলিস্তিনের। শ্রমিক সংকট কাটাতে চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে প্রায় ৭০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
যুদ্ধের মধ্যে ইসরাইলি জনগণের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। সম্প্রতি সাহায্য সংস্থা ল্যাটেটের এক জরিপে দেখা যায়, আগামী বছর ৪৫ শতাংশেরও বেশি ইসরাইলি দারিদ্র ও খাদ্য সংকটে পড়বে। যুদ্ধ শেষেও তাদের জীবন কাটবে অর্থনৈতিক মন্দায়। দেশটির রাজনীতিবিদদের মতে, যুদ্ধ শেষে দেশের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
ইতোমধ্যে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। লোহিত সাগরে হুতিদের হামলায় ব্যাহত হচ্ছে আমদানি বাণিজ্য। তেল আবিবের বেশিরভাগ আমদানি পণ্য আসে এশিয়া থেকে। এখন আফ্রিকান রুট ব্যবহার করায় বাড়ছে পণ্যের খরচ।