ছয়-ছয়টি যুদ্ধাস্ত্রবাহী 'ওরেশনিক' মিসাইল ২১ নভেম্বর আঘাত হানে ইউক্রেনের দিনিপ্রোতে। ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্য না হলেও এমন নকশায় শব্দের চেয়েও দ্রুতগতির এ অস্ত্র 'অপ্রতিরোধ্য' বলে দাবি মস্কোর। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার দাবিতে নড়ে বসেছেন পশ্চিমা সমরবিদরাও।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাশিয়ান বার্তা সংস্থা টাস জানায়, রুশ ভূখণ্ডের অনেকটা ভেতরে হামলার সমুচিত জবাব দিতে দু'দিনে ইউক্রেনের ১৭টি লক্ষ্যে শতাধিক ড্রোন ও ৯০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মস্কো। পুরো ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধসিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিশাল পরিসরে এ হামলা, অভিযোগ কিয়েভের। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রার মধ্যে এমন হামলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের মুখে ইউক্রেনের ১০ লাখের বেশি মানুষ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'বিদ্যুৎ নেই। পানি সরবরাহ কেন্দ্রগুলো কাজ করছে না। পাঁচটা কেন্দ্রে গিয়ে পানি না পেয়ে এখানে এসে পেলাম। নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী কাজ করা যায়। আজকে সকাল থেকে পরিস্থিতি অস্পষ্ট। বাইরে ভীষণ ঠান্ডা।'
আড়াই বছরের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের রাজধানীতে সরকারি কোনো স্থাপনায় হামলা চালায়নি রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো দেয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডের ভেতরে ইউক্রেনের হামলার জবাবে মস্কোর পরবর্তী লক্ষ্য কিয়েভের 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র'। এমন হুমকিই দিয়েছেন পুতিন। কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর নিরাপত্তা জোটের শীর্ষ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, 'পশ্চিমাদের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলার জবাব দিতে ওরেশনিক ব্যবহারের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোথায় কোথায় হামলা হবে, সে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনী। ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, প্রতিরক্ষা খাত এবং কিয়েভের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে হতে পারে হামলা।'
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে উচ্চ সুরক্ষিত কিয়েভ। কিন্তু পুতিনের দাবি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম রাশিয়ার ওরেশনিক হাইপারসনিক মিসাইল। এমনকি পারমাণবিক হামলার সমতুল্য হতে পারে ওরেশনিকের আঘাত, বলছেন পুতিন। আরও বলছেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের দেয়া অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী রুশ অস্ত্রভাণ্ডার।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, 'যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলছি, তাতে ন্যাটো জোটের সব দেশের যে সম্মিলিত অস্ত্র উৎপাদন, তার চেয়েও ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী রাশিয়ার অস্ত্র। আগামী বছর এ উৎপাদন আরও ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ফেলবে রাশিয়া।'
ইউক্রেনে গেলো সপ্তাহের হামলায় ব্যবহৃত ওরেশনিকের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে পশ্চিমা অস্ত্রবিদরা অবশ্য পুতিনের সব দাবি খারিজ করে দিয়েছেন।
মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জেফ্রি ল্যুইস বলেন, 'যদি সত্যিই এ অস্ত্র এতোটা ভয়ঙ্কর হতো, যতোটা পুতিন দাবি করছেন, তাহলে তিনি সেভাবেই এটি ব্যবহার করে ফেলতেন। দেখাই যাচ্ছে যে তা তিনি করেননি। হামলার পর দু'টি সংবাদ সম্মেলন করে তার জানাতে হয়েছে যে এ অস্ত্র কত কী ভয়ংকর।'
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে যেতে পারেন বলে খবরের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পুতিন। এমনটা বাস্তবে ঘটলে পুরো অস্ত্রভাণ্ডার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে রাশিয়া, হুঁশিয়ারি প্রেসিডেন্টের।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় কিছু পারমাণবিক অস্ত্র উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেও, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার আশ্বাসের বিনিময়ে ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট চুক্তির অধীনে সেসব অস্ত্র সমর্পণ করে ইউক্রেন।