এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ইরান-চীন, রাশিয়ার মতো নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে যাচ্ছে ন্যাটো

ইরান, রাশিয়া, চীন আর উত্তর কোরিয়া একজোট হয়ে যেভাবে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তাতে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে ন্যাটোরও একই পথ অনুসরণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাটো প্রধান। এরইমধ্যে, সমরাস্ত্র আর সেনা সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের জ্বালানির বাজার স্থিতিশীল হলেও নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজার।

জ্বালানি তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারে নিষেধাজ্ঞা, রুবলে লেনদেন সীমিত করে দেয়া, বিভিন্ন দেশে রিজার্ভ জব্দ করে রাখা, ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু পর রাশিয়াকে নানাভাবে কোণঠাসা করতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এতকিছুর পরও ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ তো হচ্ছেই না, সঙ্গে এবার নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে যাচ্ছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটো।

সম্প্রতি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে সামরিক খাতে পাঁচ শতাংশ ব্যয় বাড়াতে হবে। যদিও, এর ধারেকাছে নেই কোনো দেশ। এরমধ্যেই এবার ন্যাটো প্রধান বলেছেন, প্রয়োজনে রাশিয়ার ভাষাই শিখে ফেলতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ না বাড়িয়ে একজোট হয়ে বিপদ মোকাবিলা করতে হবে।

ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, ‘মিত্রদের সঙ্গে মতবিরোধ মানেই খরচ বেড়ে যাওয়া। ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এখন রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া আর ইরান একজোট। একসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাত সমৃদ্ধ করছে। আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নিজেদের ক্ষতি করছি। সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে যুদ্ধের জন্য নয়, যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য। জিডিপির দুই শতাংশ সামরিক খাতের জন্য পর্যাপ্ত না। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়াতে হবে।’

গেল বছর ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব দেয় দেড় হাজার কোটি ইউরো সামরিক খাতে ব্যয় করে ইউরোপের অস্ত্র কারখানাগুলো থেকে সমরাস্ত্র কেনার জন্য। কিন্তু জোটের সব দেশ এখনও এতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এদিকে, ন্যাটোর অন্যতম প্রধান সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকায় আরও বিপাকে পড়েছে ইইউ।

এ অবস্থায় অস্ত্র আর সেনা সক্ষমতা বাড়াতে একজোট হয়েছে জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই চাপে আছে ন্যাটো। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর জুনে নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠেয় ন্যাটো সম্মেলনে সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনা পাঁচ শতাংশ। ইইউ'র প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বলছেন, ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য হলেও সামরিক খাত শক্তিশালী করতে হবে।

জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, ‘ন্যাটোর বেধে দেয়া টার্গেট আমাদের পূরণ করতে হবে। টার্গেট পূরণ কঠিন হলেও আমাদের সেনাবাহিনী, সমরাস্ত্র, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ করতেই হবে, যেন নিজেদের অন্তত রক্ষা করতে পারি। জানি এটা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে।’

এ অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই রুশ জ্বালানি খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আরও বিপাকে পড়েছে ইউরোপ। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দর। যদিও হোয়াইট হাউজ বলছে, রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকেই স্থিতিশীল হচ্ছে এই বাজার। গেলো কয়েক বছরের মধ্যে এখনই জ্বালানির দর স্থিতিশীল বলেও দাবি ওয়াশিংটনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ যখন শুরু হয়, জ্বালানির দর ১০০ ডলারে উঠেছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষেরও পকেট কাটা গেছে। কিন্তু গেলো কয়েক বছরের মধ্যে এখন স্থিতিশীল আছে এই দর। ২০২৫ সালে আরও স্থিতিশীল হবে বাজার। এক বছর আগে যেই কাজ করতে পারিনি, এখন করেছি। পুতিনকে এই আগ্রাসনের মূল্য অর্থনৈতিকভাবে দিতে হবে।’

এদিকে, এমন টানাপড়েনের মধ্যেও থেমে নেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। ইউক্রেনের সামরিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে মস্কো। অন্যদিকে রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে কিয়েভ। হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে তুর্কস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের একটি অংশে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া।

এদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার হয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনারা লড়ছে কুরস্কে। এই ঘটনা নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের শেষ নেই।

এবার দক্ষিণ কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার তিন হাজার সেনা হতাহত হয়েছেন। এরমধ্যে অন্তত ৩০০ সেনার প্রাণ গেছে। সিউল বলছে, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নির্দেশ দেয়া আছে ধরা পড়ার আগেই যেন তারা আত্মহত্যা করে।

এসএস